সেই ‘ফারাজ’ সিনেমার আড়ালে ভারতে পাঁচার হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা

ট্রান্সকম গ্রুপ ভারতের চলচ্চিত্র ‘ফারাজ’ নির্মাণে অন্তত ৭৩ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ এবং ২০২১ সালে এই অর্থ পাচার করা হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।

ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমানের পুত্র ফারাজের জীবন অবলম্বনে নির্মিত এই কল্পকাহিনিভিত্তিক চলচ্চিত্রের জন্য পুরো অর্থ জোগান দিয়েছে ট্রান্সকম গ্রুপ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্র অনুযায়ী, ভারতে এ ধরনের সিনেমা প্রযোজনার জন্য কোনো অর্থ প্রেরণের অনুমতি নেওয়া হয়নি। ট্রান্সকম গ্রুপের অভ্যন্তরীণ নথিতেও এ ধরনের প্রকল্পের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া বিতর্কিত এই সিনেমাটি সম্পূর্ণ অর্থায়ন করেছেন সিমিন রহমান ও তার প্রতিষ্ঠান। সিনেমাটির পরিচালক হানসাল মেহতা ‘ফিল্ম ফেয়ার’ পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য প্রকাশ করেন।

হানসাল মেহতা দাবি করেছেন, এটি একটি ফরমায়েশি প্রকল্প, যার পরিকল্পনা, পাণ্ডুলিপি এবং আর্থিক সহযোগিতা সরাসরি সিমিন রহমান এবং তার শিল্প গ্রুপের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় ২২ জন নিহত হন। ওই হামলার সময় ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমানের ছেলে ফারাজ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে ফারাজের সন্ত্রাসীদের সহযোগী হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে যে এই ঘটনার পর সিমিন রহমান বিপুল অর্থ ব্যয়ে তার পুত্র ফারাজকে ‘বীর’ হিসেবে উপস্থাপন করার পরিকল্পনা করেন। বাংলাদেশে সিনেমা নির্মাণে অনাগ্রহ দেখা দেওয়ায়, তিনি ভারতে গিয়ে একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের মধ্যস্থতায় ভারতের পরিচালক হানসাল মেহতা এই সিনেমা নির্মাণে সম্মত হন।

সিনেমাটি নির্মাণের সময় তিনটি প্রতিষ্ঠান – টি সিরিজ, বেনারস মিডিয়া ওয়ার্কস এবং মাহানা কোম্পানিকে প্রযোজক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহানা কোম্পানিটি সিমিন রহমান এবং তার পুত্রের মালিকানাধীন একটি ভৌতিক প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে এই প্রকল্পের অর্থায়ন করা হয়।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যে জানা গেছে, সিমিন রহমান এবং তার পুত্র ফারাজ এই সিনেমা নির্মাণের সময় একাধিকবার ভারতে যান। এছাড়াও, পরিচালক হানসাল মেহতা এবং তার দল বাংলাদেশে কয়েকবার এসে সিমিন রহমানের সঙ্গে আর্থিক বিষয় চূড়ান্ত করেন।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই সিনেমার নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়, যা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন পরিপন্থী। এ বিষয়ে সিআইডি এখন সিমিন রহমান এবং তার পুত্রের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের তদন্ত করছে।

এছাড়া, ট্রান্সকম গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘চরকি’ নামে একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবৈধ অর্থায়নের অভিযোগও রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে যৌথ অর্থায়নের মাধ্যমে চরকি প্রতিষ্ঠার সময়ও কোনো সরকারি অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

বর্তমানে এই সব অভিযোগের ব্যাপারে গভীর অনুসন্ধান চলছে এবং ট্রান্সকম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও তদন্তাধীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *