Here is the rewritten text in a formal and professional tone in Bengali:
মন্ত্রীদের সরকারি গাড়ির অপব্যবহারের অভিযোগ অনেক পুরোনো। ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সরকারি গাড়ি ব্যবহারে মন্ত্রীদের আচরণ ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। সবকিছু আমূল পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাগণও এখন একই পথ অনুসরণ করছেন। সরকারি গাড়ি ব্যবহারে তারা নিয়ম-নীতি মানছেন না। বিধি অনুযায়ী, প্রত্যেক উপদেষ্টা একটি করে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের অধিকারী। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কেউ কেউ নিজের ও দপ্তরের জন্য তিন থেকে চারটি গাড়ি দখলে রেখেছেন। এসব গাড়ি উপদেষ্টাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া উপদেষ্টাদের পিএস, এপিএস ও জনসংযোগ কর্মকর্তারাও কখনো কখনো গাড়ি ব্যবহার করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের স্বার্থে নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করবে—এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। উপদেষ্টাদের গাড়ি ব্যবহারের বর্তমান চর্চা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৌলিক আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সমকালের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২২ জন উপদেষ্টার মধ্যে ৮ জন ছাড়া বাকি সবাই একাধিক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সরকারি কোনো গাড়ি ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিটি উপদেষ্টা সরকারি পরিবহন পুল থেকে একটি করে টয়োটা হাইব্রিড ক্যামরি গাড়ি ও দৈনিক ১৮ লিটার তেলের সমপরিমাণ বরাদ্দ পান। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েকজন উপদেষ্টার পরিবার বিভিন্ন দপ্তর ও প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত দামী গাড়ি ব্যবহার করছেন, যা পরিচালনায় চালক, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা খরচ হচ্ছে।
১৯৭৩ সালের ‘দি মিনিস্টারস, মিনিস্টারস অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস)’ আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা (বর্তমান উপদেষ্টারা মন্ত্রী মর্যাদাসম্পন্ন) একটি সরকারি গাড়ি সার্বক্ষণিক ব্যবহারের অধিকারী। সংশোধিত আইনে বলা হয়, জরুরি দাপ্তরিক কাজ বা ঢাকার বাইরে সফরের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, উপদেষ্টারা একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন, যা সরকারি সম্পদের অপচয় ও নিয়ম লঙ্ঘনের সামিল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধ ও নিয়ম-নীতি মেনে চলা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই সরকার যদি নিয়ম প্রতিষ্ঠায় দৃষ্টান্ত স্থাপন না করে, তবে সেটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অতীতের সংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি হলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণের প্রত্যাশা, বর্তমান সরকার কৃচ্ছ্রসাধন করে অতীত সংস্কৃতি থেকে সরে আসবে এবং সুশাসনের চর্চা প্রতিষ্ঠা করবে।’
সরকারি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের স্বেচ্ছাচারিতা, দপ্তরের বরাদ্দকৃত গাড়ির অপব্যবহার এবং এর ফলে সৃষ্ট ব্যয়ের বিশদ তথ্য প্রমাণ করে যে নিয়ম-নীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। সূত্র : সমকাল