কুমিল্লায় হিন্দু নারী ধর্ষণের অভিযোগ , চলছে বিএনপির নামে জামায়াত-শিবিরের গুজব ছড়ানো

কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু নারী ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর প্রচার। স্থানীয়ভাবে একটি লোমহর্ষক ঘটনা হলেও, এর রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে এক শ্রেণির অপতৎপর গোষ্ঠী। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির (Jamaat-Shibir) ঘরানার কিছু অনলাইন কর্মী ও সংগঠন এ ঘটনাকে বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এর মাধ্যমে তারা মূল আসামীকে আড়াল করার ঘৃন্য ষড়যন্ত্রে নেমেছেন।

ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে, মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে। ওই রাতেই স্থানীয় এক ব্যক্তি ফজর আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তিনি একটি হিন্দু নারীর ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেছেন। ভুক্তভোগী ওই নারী বর্তমানে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। জানা যায়, ১১নং দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এর বডিগার্ড ছিলেন মোঃ ফজর আলী , এবং আ’লীগের রাজনীতির সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন।

পরদিন শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে ওই নারী মুরাদনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, রাত ১০টার দিকে অভিযুক্ত ফজর আলী ভুক্তভোগীর ঘরের দরজায় এসে ডাকাডাকি শুরু করেন। দরজা না খোলায় তিনি জোরপূর্বক দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন এবং ধর্ষণ করেন। চিৎকার শুনে চাচি ও প্রতিবেশীরা পূজার অনুষ্ঠান থেকে ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তারা ফজর আলীকে ঘটনাস্থলে হাতে-নাতে ধরতে সক্ষম হন।

স্থানীয় সজীব নামের এক যুবক বলেন, “রাত সাড়ে দশটার দিকে ভুক্তভোগীর চাচি আমাদের জানালে আমরা দৌড়ে যাই, দেখি দরজা ভাঙা, আর ফজর আলী তাকে জোর করে ধর্ষণ করছে। পরে আমরা সবাই মিলে তাকে উদ্ধার করি।”

প্রথমিকভাবে অভিযুক্ত ফজর আলীর পরিচয় “বিএনপি কর্মী” হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়, তিনি ইউনিয়ন বিএনপির পদ প্রত্যাশী। তবে তদন্তে উঠে আসে, তিনি দীর্ঘদিন স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ (Awami League) নেতা ও ১১নং রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকনের দেহরক্ষী হিসেবেও কাজ করেছেন।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতি সাদিক কায়েস (Sadik Kayes) পর্যন্ত যাচাই-বাছাই না করেই ঘটনাটিকে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচার করতে থাকেন। তার একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরেই ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা ছড়ায় আরও বেশি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ফজর আলী জনগণের হাতে ধরা পড়লে উত্তম-মধ্যম খেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। পুলিশ জানায়, মামলা দায়েরের পর থেকেই অভিযান চলছে এবং শিগগিরই অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হবে।

তবে ঘটনার পরপরই একটি ফেসবুকভিত্তিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘মুরাদনগর লাইভ টিভি’—যা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের মিডিয়া উইংয়ের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই পেজ থেকে ফজর আলীকে বিএনপি নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তিকর প্রচার শুরু হয়।

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অন্জন ও সদস্য সচিব মোল্লা মজিবুল হক এক যৌথ বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন— আওয়ামী লীগের মিডিয়া উইং বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বারবার এমন অপপ্রচার চালিয়ে আসছে।

বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, সাবেক এমপি ইউসুফ হারুন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা বিএনপিকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করছে।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, “ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।”

তবে এই ঘটনাকে ঘিরে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক দিক হলো—ঘটনার প্রকৃত সত্যকে পেছনে ফেলে, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ছদ্মনামে জামায়াত-শিবির ঘরানার একাধিক পেজ থেকে ‘বিএনপি নেতা দ্বারা হিন্দু নারী ধর্ষণ’ শিরোনামে পোস্ট ছড়ানো হয়েছে। অথচ খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্তের বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না বললেই চলে। বরং তিনি আওয়ামীলগের রাজনীতির সঙ্গে বহুদিন ধরে যুক্ত ছিলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি চিহ্নিত কৌশল—বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে জামায়াত-শিবির নিজেরাই গুজব রটাচ্ছে। এবং এ গুজবের আড়ালে চাপা পড়ছে আসল অপরাধী ও প্রকৃত বিচার প্রক্রিয়ার প্রশ্ন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *