কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের হামলার কথা জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এই ঘটনায় অন্তত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
নিহতের নাম শিহাব কবির নাহিদ। বিমান ঘাঁটির পার্শ্ববর্তী সমিতিপাড়া এলাকায় তার বাড়ি।
আজ সোমবার দুপুরে আইএসপিআর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দুর্বৃত্তরা কক্সবাজারে বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালায়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুবক্তগিন মাহমুদ সোহেল জানান, আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে ‘মৃত অবস্থায়’ হাসপাতালে আনা হয়।
তিনি আরও জানান, নিহতের মাথার পেছনের অংশে গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল।
ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন সংঘর্ষের ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘এই ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংঘর্ষের কারণ উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পুলিশ বক্সের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি দুপুর ১২টার দিকে ঘটেছিল।
তিনি জানান, ‘সংঘর্ষের সময় শিহাব কবির (৩০) নামে একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হন। তিনি সমতি পাড়া ১ নং ওয়ার্ডের নাসির উদ্দিনের ছেলে।’
নিহত নাহিদের বাবা নাসির উদ্দিন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গ এলাকায় বিলাপের সুরে বলেন, ‘সকালে আমি শহরে ডাক্তার দেখাচ্ছিলাম। হঠাৎ খবর এলো গুলিতে আমার ছেলের মাথার খুলি উড়েছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। এখন আমার ছেলে মর্গে। আমার ঘরে গুলি কেন এলো? আমার সন্তান মরলো কেন? এর জবাব আমি কার কাছে চাইবো?’
সমিতি পাড়ার বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার দুপুরে বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য এলাকাবাসীকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে বিমানবাহিনী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং এলাকার প্রতিনিধিদের সাথে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকের সময় নির্ধারণ ছিল। এ লক্ষ্যে বেলা ১২ টার দিকে সমিতি পাড়ার বাসিন্দা মো. জাহিদসহ আরও কয়েকজন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যাচ্ছিল।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাহিদের সঙ্গে বিমানবাহিনীর একটি তল্লাশিচৌকিতে হেলমেট পরা নিয়ে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এরপর জাহিদের আত্মীয়স্বজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটি ও সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। থেমে থেমে আধা ঘণ্টা ধরে চলা ওই ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। তাতে গুলিবিদ্ধ হন শিহাব কবির নাহিদ। স্থানীয় লোকজন শিহাবকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিহাবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে আসতে থাকেন। বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।