যোগ্যতার বদলে গোষ্ঠীগত নিয়ন্ত্রণ: জামাতি প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রতিষ্ঠানগত বাস্তবতা নিয়ে ফাহাম আবদুস সালাম একটি বিশ্লেষন ধর্মী পোষ্ট করেছেন ফেসবুকে। তিনি তুলে ধরেছেন কেন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষের ওপর নির্ভর করে বড় প্রতিষ্ঠান টেকসই রাখা সম্ভব নয়।

ফাহাম আবদুস সালামের সেই পোষ্ট তাজাখবরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো

জামাতের বিশাল বিশাল ইনস্টিটিউশন আছে – এটা একটা ডীপলি প্রবলেম্যাটিক ও ক্যাটাগরিক্যালি ভুল স্টেটমেন্ট।
জামাত একটা পলিটিকাল পার্টি – তাই এটা প্রাইভেট প্রপার্টি ঔন করতেই পারে না। এখন আপনি যদি বলেন জামাত নেতার ব্যাংক হোলো জামাতের ব্যাংক – তাহলে জামাতের চাইতে বিএনপির (কিংবা আওয়ামী লীগের) অনেক বেশী ইনস্টিটিউশন আছে। কারণ দুই পার্টির নেতাদের আরো বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে। প্রাইভেট প্রপার্টি এবং লিমিটেড কম্পানি কীভাবে একটা রাজনৈতিক দলের হয় – আমার বুঝে আসে না।
কিন্তু এই কথাটা যখন বলা হয় – তখন আরেকটি জিনিস মাথায় রাখা হয় কিন্তু উচ্চারণে জানানো হয় না। সেটা হোলো জামাত নেতার প্রতিষ্ঠানে জামাত ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকজনদের এম্প্লয় করা হয়। এই কথাটা ১০০% সত্য। এবং এই জায়গাটা আমার কাছে ডীপলি প্রবলেম্যাটিক মনে হয়।
দেখেন আপনার প্রতিষ্ঠান আপনি কীভাবে চালাবেন – এটা আপনার বিষয়। যতক্ষণ লিগ্যাল কোড মেনে চলছেন – দ্যাটস ফাইন। কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠান চালানোর ধরন দেখে আপনার মানসিকতা কিছুটা তো বোঝাই যায়।
কোনো লার্জ অর্গানাইজেশন – যেটা লাভ করতে চায় – এক টাইপের মানুষদের দিয়ে চালানো – কোনো স্ট্রেংথ না – এটা দুর্বলতা। এই দেশের কোনো ছোটো প্রতিষ্ঠান আপনি ধরেন শুধু ট্রান্স-জেন্ডার বা মেয়েদের দিয়ে চালাতে পারবেন এবং কিছুদিন লাভজনকও করে রাখতে পারবেন। কিন্তু সাইজ যখন বড় হবে – তখন সেখানে সমাজের সব টাইপ মানুষের আসার কথা। য়েস – সেখানে চোর থাকবে, ব্রিলিয়ান্ট থাকবে, গুটিবাজ থাকবে, মুসলমান, হিন্দু, ক্রিশ্চান, চাকমা থাকবে। থাকতেই হবে।
জামাতের প্রতিষ্ঠান বলে যেগুলোকে সাধারণত চেনানো হয় – সেখানে এই ঘটনাটা ঘটে নাই। সেখানে রিলিজিয়াস লোকদের, জামাতে ইসলামী ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আপনি বলতে পারেন যে – এতে ভালো হয়েছে। মানুষ মোরাল মানুষদের সেবা পায়। পয়সা চুরি কম হয়। য়েস – সেই হিসাবে আপনি ঠিক আছেন।
কিন্তু প্রতিষ্ঠান বানানো মানে মহল্লা বানানো না। আমার কাছে মনে হয় যে আপনি মেরিটোক্রেসি ভায়োলেট না করলে কোনো লার্জ অর্গানাইজেশন এক টাইপের মানুষদের দিয়ে চালাতে পারবেন না। পারার কথা না।
অনেকেই মনে করেন যে এইসব প্রতিষ্ঠান জামাতের সম্পদ। আমি মনে করি যে ঠিক উল্টা। এইসব প্রতিষ্ঠান প্রমাণ করে জামাতে ইসলামীর কোনো মেইনস্ট্রীমিং হয় নাই। এখন আমি জানি যে আমাদের সমাজে জামাতে ইসলামীর ব্যাপারে হিউজ ট্যাবু আছে। তাদেরকে ফাংশান করতে দেয়া হয় নাই এবং সেকুলার সমাজ তাদেরকে নানা ভাবে হেনস্তা করেছে। বহু তরুণকে তাদের পোটেনশিয়াল অনুযায়ী বাড়তে দেয়া হয় নাই – কারণ সে জামাত পরিবারের ছেলে। এই কথা সত্য এবং বাংলাদেশের জন্য সেটা খুবই খারাপ হয়েছে। কোনো স্যাটিস্ফেকশন থেকে কথাটা আমি বলছি না। আমি আসলেই এই অবিচারে সারা জীবন ধরে মর্মাহত।
কিন্তু এও সত্য যে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ যে সো-কল্ড জামাতী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে – সেগুলো আসলে খুবই উইক প্রতিষ্ঠান। একটা উদাহরণ দেই? আওয়ামীরা যে ইসলামী ব্যাংক খেয়ে ফেলবে – এটা বুঝতে পেরে একজন টপ-ব্যাংকার ২০১০ এর দিকে এই ব্যাংককে প্রস্তাব দেয় – যে আপনারা IFC র সাথে পার্টনারশীপে যান। IFC র ছাপ্পা থাকলে আওয়ামীরা আপনাদের খেয়ে ফেলতে পারবে না। দেড় বছর তারা এই কথায় কর্ণপাতই করে নাই – কারণ সম্ভবত তারা মনে করেছিলো যে এটা ইহুদি-নাসারাদের ষড়যন্ত্র। যখন তাদের হুশ হয় – তখন it was too late. ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি যে তাদের ম্যানেজমেন্টে যদি যথেষ্টসংখ্যক বাহারী মাদারচোত থাকতো – এই বিপদটা তারা বুঝতে পারতো।
এই সমস্যার মূল কারণ হোলো আপনি যদি ম্যানেজমেন্ট সব এক টাইপের লোকদের দিয়ে চালান – আপনি এডভার্সিটি এন্টিসিপেট করতে পারবেন না। আশা করি আপনি যদি গোবর-গাণ্ডু না হয়ে থাকেন – বুঝবেন যে দেশের সব ব্রিলিয়ান্ট মানুষ মাথায় টুপি পরে না বা স্লীভলেস ব্লাউজও পরে না বা সুটও পরে না। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আর কি! আপনি যদি আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন যে ৫ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে আপনি ম্যানেজমেন্টে ওপরে উঠতে দেবেন না – এইটা আসলে আপনার স্ট্রেংথ না – উইকনেস। কারণ এজ এ ম্যানেজমেন্ট – আপনি কোনোদিনও শিখতে পারবেন না যে যেই মেয়েটা স্লীভলেস ব্লাউজ পরে – তাকেও আপনার কাজে লাগতে পারে। এই টাইপদের আপনি কীভাবে ম্যানেজ করবেন – সেটা আপনি জানেনই না। এমন তো হতে পারে যে এরকম একটা মেয়েই দেশের সেরা অনকোলজিস্ট। এখন পলিটিকাল পার্টিতে আপনি এই মেয়েকে নেবেন না – দ্যাটস ফাইন। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান যার লক্ষ্য পয়সা বানানো – সেখানেও যদি না নেন – সেটা আসলে আপনার উইকনেস।
এই উইকনেস নিয়েই আপনি প্রচুর লাভ করতে পারবেন – সত্য। কারণ যেই লেভেলে আপনি থাকতে চান – সেই লেভেলে হয়তো স্বtypeপ্রীতি সমস্যাজনক না। মানছি। কিন্তু আপনি কোনোদিনও স্কেলিং করতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠান হিসাবে আপনি যদি সত্যিই বড় হতে চান – আপনাকে পিওর মেরিটোক্রেসি এডপ্ট করতেই হবে। এ ছাড়া কোনো গতি নাই।
ইন ফ্যাক্ট আমার নিজের জন্য আমি একটা ছোট্ট টেস্ট ডিজাইন করেছি। বেশ আগেই ঠিক করেছিলাম। জামাতে ইসলামী তখনই দেশ চালানোর উপযুক্ত হবে বলে আমি মনে করি – যখন তারা দেখাতে পারবে একটা সো-কল্ড জামাতি প্রতিষ্ঠান চলছে বাংলাদেশের মানুষদের প্রপার রেপ্রেজেন্টেশানে। মানে আর সব প্রতিষ্ঠান যেভাবে চলে – সেরকম হারামী, বাটপার, গুটিবাজদের দিয়েই আপনি আপনার প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। আপনি মার্কেট অনুযায়ী প্রপার বেতন দিচ্ছেন (অনেকেই জানেন না যে ইসলামী ব্যাংক যখন দেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যাংক ছিলো – তখনও তাদের এমপ্লয়ীদের আশ্চর্যজনকরকমের কম বেতন দিতো। যার ফলে স্ট্যাব্লিশড ব্যাংকাররা কেউ ইসলামী ব্যাংকে যেতো না। পুরা ইকোসিস্টেমটাই ছিলো এই ব্যাংকের হোমগ্রোনদের নিয়ে। কারণ তাদের মডেল ছিলো যে আমরা বেশী-সংখ্যক জামাতীদের চাকরি দেবো – কিন্তু খুব কম বেতন দেবো)
মেইনস্ট্রীমিং মানে শুধু আপনি দাড়ি-টুপি পরে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো কম্পানির CEO হবেন – তাই না। স্লীভলেস কাপড় পরা মেয়েটাকেও আপনার কম্পানিতে কাজ করতে পারতে হবে। আপনি বলতে পারেন যে – মেরা মর্জি। এই বেটিরে নিবো না। ফাইন। এর ব্যাকল্যাশটাও কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। যদি আপনি মেইনস্ট্রীম হতে চান – এটা কখনোই এক পক্ষের ইচ্ছা বা নারাজি দিয়ে হবে না।
এজন্যেই আমি মনে করি যে বাংলাদেশে যখন ৩টা লার্জ জামাতি প্রতিষ্ঠান হবে – যেটা শুধু জামাতি না বরং পুরা বাংলাদেশের সবার জন্য উন্মুক্ত – এবং জামাতের মানুষরা এদের ম্যানেজ করতে পারে (ও লাভজনক করে রাখতে পারে)- তখন আমি ধরে নেবো যে জামাত দেশ চালানোর জন্য লায়েক হয়েছে।
(টেস্টটা আমার নিজের জন্য। আপনার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। জামাত দেশ চালানোর উপযুক্ত কি না – এর একমাত্র ভায়াবেল টেস্ট হোলো মানুষ তাকে ভোট দেয় কি না। মানুষ যদি সিপিবিকেও ভোট দিয়ে সরকার বানাতে আমন্ত্রণ জানায় – আই এক্সেপ্ট এবং স্বীকার করি যে সে দেশ চালানোর উপযুক্ত)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *