অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-কে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি—পরিবারের সদস্য, সহযোগী ও ক্লায়েন্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন। আজ (বুধবার) প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস দাবি করেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ সরকারের হাতে রয়েছে।
‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো ভারতের ওপর নির্ভর করছে’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। তবে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব কি না, তা ভারতের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
তিনি জানান, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দেয়নি। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। সেটা তিনি দেশে ফিরে করুক বা অনুপস্থিতিতেই বিচার চলুক—বিচারের প্রক্রিয়া বন্ধ হবে না।”
কুখ্যাত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন
সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ber several notorious secret detention centers, popularly known as ‘House of Mirrors’ বা আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন। এসব কেন্দ্র নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যখন আপনারা (সাংবাদিকরা) নিজের চোখে এসব দেখবেন এবং নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলবেন, তখন বুঝতে পারবেন কত ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।”
তিনি জানান, এসব বন্দীশালা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে এগুলোকে জাদুঘরে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে জনগণ অতীতের নির্মম ইতিহাস জানতে পারে।
শেখ হাসিনার পরিবার ও দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে এবং দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটিশ লেবার পার্টির সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq)। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা (Sheikh Rehana)-র মেয়ে।
এই প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলাটি অত্যন্ত গুরুতর। দেশে তার বিপুল সম্পদ রয়েছে, যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুদক বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে।”
রোহিঙ্গা সংকট ও সমাধানের প্রচেষ্টা
সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে এবং একটি “নিরাপদ অঞ্চল” প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চলছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে স্পষ্ট, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। তার দেশে প্রত্যাবর্তন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত ও দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সরকার সক্রিয় রয়েছে। একইসঙ্গে, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।