বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আরও কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে, যা গত ২১ বছরে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank)-এর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে সংরক্ষিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত দুই দশকের মধ্যে এত কম প্রবৃদ্ধি আর দেখা যায়নি।

টানা সাত মাসের নিম্নমুখী ধারা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঋণ প্রবৃদ্ধি টানা সাত মাস ধরে কমছে। ২০২৪ সালের জুনে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, এরপর জুলাইয়ে ১০.১৩%, আগস্টে ৯.৮৬%, সেপ্টেম্বরে ৯.২%, অক্টোবরে ৮.৩%, নভেম্বরে ৭.৬৬%, ডিসেম্বরে ৭.২৮%, এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এটি দাঁড়ায় ৭.১৫ শতাংশে। অবশেষে ফেব্রুয়ারিতে তা নেমে আসে ৬.৮২ শতাংশে।

অর্থনীতিবিদদের পর্যবেক্ষণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পতন দেশের ব্যাংকিং ও ব্যবসায়িক খাতে গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন (Zahid Hussain) বলেন, “রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমছে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এই চাহিদা কমই থাকবে।”

তিনি আরো বলেন, “যেসব ব্যাংকের বোর্ড সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পুনর্গঠিত হয়েছে, তাদের উপর বড় ঋণ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, ফলে ঋণ সরবরাহও সীমিত হয়ে পড়েছে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্কারোপ (US Tariff) প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “এটি বাংলাদেশি রপ্তানি ও ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

ব্যাংকারদের মতামত

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (Mutual Trust Bank)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (Syed Mahbubur Rahman) বলেন, “দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে আর্থিক খাতে ঋণের চাহিদা দুর্বল রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ব্যবসায়িক পরিবেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনাও কম।”

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক ব্যাংকিং খাতে ঋণ চাহিদাকে আরও প্রভাবিত করতে পারে।”

ঋণের পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে মোট ঋণ দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা।

এই তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে ঋণের পরিমাণ বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের বিষয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *