সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে বাড়ল ১৪ টাকা, বোতলপ্রতি দাম ১৮৯ টাকা

এক সপ্তাহের টানা দর-কষাকষি আর একাধিক বৈঠকের পর অবশেষে দেশের ভোজ্যতেল বাজারে নতুন দাম কার্যকর হলো। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছেন মিলমালিকেরা। এর আগে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৭৫ টাকা।

রোববার (১৩ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (Bangladesh Vegetable Oil Refiners and Vanaspati Manufacturers Association)। সংগঠনটি জানায়, আজ থেকেই এই নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।

শুধু বোতলজাত নয়, খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দামেও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এখন থেকে প্রতি লিটার খোলা তেল কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১৬৯ টাকা, যা আগে ছিল ১৫৭ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলের নতুন দাম দাঁড়িয়েছে ৯২২ টাকা—পূর্বের দাম ছিল ৮৫২ টাকা।

পেছনের কাহিনি: কর-সুবিধার মেয়াদ শেষ, ব্যবসায়ীদের চাপ

গত ৩১ মার্চ সরকার ঘোষিত ভোজ্যতেলে শুল্ক ও কর রেয়াতের মেয়াদ শেষ হয়। ঠিক পরদিন, ১ এপ্রিল, মিলমালিকেরা নতুন দর কার্যকরের ঘোষণা দেন। এর আগে ঈদের ঠিক আগে ২৭ মার্চ তারা প্রস্তাব দিয়েছিলেন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম একধাপে ১৮ টাকা এবং খোলা তেলের দাম ১৩ টাকা বাড়ানোর।

ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, সরকার কর রেয়াতের সময়সীমা না বাড়ালে মূল্যবৃদ্ধি অপরিহার্য। সেই দাবির পেছনে যুক্তি হিসেবে তারা দেখিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়া এবং আমদানি পর্যায়ে করের চাপ। ৯ ডিসেম্বরের পর এই প্রথমবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হলো।

সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিল সরকার

দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাওয়ার পর বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (Bangladesh Trade and Tariff Commission) বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ শুরু করে। তবে ঈদের ছুটির পর গত সপ্তাহজুড়ে একাধিক বৈঠকেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন এবং মিলমালিকদের মাঝে রবিবার, মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একাধিক দফা বৈঠক চলে।

প্রতিবারই আলোচনায় উঠে আসে, সয়াবিন তেলের দাম ১৯০ টাকার ওপরে রাখা হবে কি না। তবে শেষপর্যন্ত বোতলজাত তেলের দাম ১৮৯ টাকায় নির্ধারণে মিল হয়।

ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ, এনবিআর নীরব

দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার আগেই ট্যারিফ কমিশন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) (National Board of Revenue) কে ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক-কর রেয়াত ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। তবে এখনো এনবিআর এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। ফলে, নতুন দাম কার্যকর হলেও ভোক্তাদের জন্য মূল্যবৃদ্ধির চাপ কিছুটা লাঘব হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

বাজারে নতুন চাপ, ভোক্তারা দুশ্চিন্তায়

রমজান ও ঈদের আগের সময়ে এমন মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ভোক্তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাদের দৈনন্দিন ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *