‘নির্বাচিত নন, প্রতিদিন তা মনে করিয়ে দেওয়া হবে’—অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে সালাহ উদ্দিন

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে কড়া ভাষায় প্রশ্ন তুলেছেন সালাহ উদ্দিন আহমদ (Salah Uddin Ahmed)। তিনি বলেছেন, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় এবং প্রতিদিন তাদের সে কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। রোববার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন ২০২৫’–এ বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের এই সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহ উদ্দিন বলেন, “গণতন্ত্রের কথা বলে আপনারা যদি গণতন্ত্রের বিপরীত পথে হাঁটেন, নির্বাচন বলেও যদি বিভ্রান্তি তৈরি করেন, তাহলে সেটা কার স্বার্থে? এটা কি জনগণের প্রত্যাশা?”

তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার মন্তব্যে বিভ্রান্তি বাড়ছে। বিএনপির দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন ঘিরে একটি রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা যখন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন, তখন দেখি অন্য উপদেষ্টারা জনগণের পক্ষ থেকে নিজেদের পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত দাবি করছেন! স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে জনগণ বহু মন্তব্য করেছে, তা কি উনি দেখেননি?”

বিশেষ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার এক সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়েও ক্ষোভ জানান সালাহ উদ্দিন। ওই উপদেষ্টা ‘নির্বাচিত হয়েছেন’ বলে মন্তব্য করায় সালাহ উদ্দিন প্রশ্ন তোলেন, “কীভাবে? জনগণ কী আপনাদের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছে? তাহলে নির্বাচন কমিশনের দরকার কী?”

তিনি আরও বলেন, “আপনারা যদি রাস্তার গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আসেন, তাহলেও নির্বাচিত সরকারের বিকল্প হতে পারেন না। আপনারা অনির্বাচিত, এবং প্রতিদিন তা মনে করিয়ে দেওয়া হবে।”

প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনি সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু আপনার বারবার অবস্থান পরিবর্তন—ডিসেম্বর না জুন—এটা জাতি ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।”

বিএনপি নেতার দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন, যেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির দিকেও ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তারা জানিয়েছে, জুনের মধ্যেই প্রস্তুতি শেষ হবে। আমরা চাই, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিসেম্বরেই নির্বাচন হোক।”

সালাহ উদ্দিন দাবি করেন, বাংলাদেশের মানুষ এক দফার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক গণ–অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিল ছাত্র সমাজ ও সাধারণ জনতা। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “এটা কোনো সামাজিক বা অর্থনৈতিক বিপ্লব নয়, বরং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াই।”

তিনি বলেন, “আমরা চাই তাড়াতাড়ি ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হোক, সাংবিধানিক অধিকার ফিরে আসুক। সংবিধান বর্তমানে রোগাক্রান্ত। এটা সংস্কারের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে, যেন দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব হয়।”

এই সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না (Mahmudur Rahman Manna), সাইফুল হক (Saiful Haque) প্রমুখ।

সম্মেলনের মাধ্যমে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘ভাসানী জনশক্তি পার্টি’। দলটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন শেখ রফিকুল ইসলাম এবং মহাসচিব হয়েছেন আবু ইউসুফ সেলিম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *