শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

রাজধানীর পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পে রাজউক প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina), তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy) সহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব (Zakir Hossain Galib) এই আদেশ দেন। পাশাপাশি, আসামিদের গ্রেপ্তারসংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে।

এ মামলায় যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন—গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য নাসির উদ্দীন, সদস্য মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক কামরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, পরিচালক নুরুল ইসলাম এবং সাবেক সদস্য শফি উল হক।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয়সহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদালত ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন গ্রেপ্তারের প্রতিবেদন জমা দিতে।”

দুদকের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করা হয়, যেখানে তার সঙ্গে রাজউক ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়। অপরদিকে দ্বিতীয় মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জন আসামির তালিকায় রয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত মালিকানায় ঢাকায় বাসা বা ফ্ল্যাট থাকার বিষয়টি হলফনামায় গোপন করেন। একইসঙ্গে তার ছেলে-মেয়ে, বোন ও ভাগ্নে-ভাগ্নিদের নামেও আবাসন থাকার পরও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দে সরকারি বিধি-বিধান লঙ্ঘন করেন। দপ্তরের প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের ৯ নম্বর প্লট নিজের নামে রেজিস্ট্রি করান, যা দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এর আগেও ১০ এপ্রিল, শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে একই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। এরপর ১৩ এপ্রিল, পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা (Sheikh Rehana), ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, ভাগ্নি আজমিনা সিদ্দিক ও সংসদ সদস্য টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ মোট ৫৩ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

এই ঘটনায় দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এমন ধারাবাহিক মামলাকে অনেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখলেও, আইনি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অস্বীকার করছেন না আইন বিশ্লেষকরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *