২০২৩ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং সংসদ সদস্য হওয়া থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan)। রাজনীতিতে সক্রিয় এক ক্রীড়াবিদের পদচারণা, মনোনয়নপ্রাপ্তি এবং নির্বাচন—সব কিছু নিয়ে সমাজে চলেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কিন্তু বিতর্ক যতই থাকুক, নিজের সিদ্ধান্তে এখনও অটল ও আত্মবিশ্বাসী সাকিব। তাঁর ভাষ্য, “আমি আমার আসনে আবারও দাঁড়ালে কেউ জিততে পারবে না।”
সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেন, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তার ভুল ছিল না, বরং সেটি ছিল একটি সচেতন এবং উদ্দেশ্যপ্রসূত পদক্ষেপ। তার মতে, “যদি রাজনীতিতে যাওয়া ভুল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য কেউ গেলে সেটাও ভুল হবে। রাজনীতি করার অধিকার একজন সাধারণ ডাক্তার, আইনজীবী, ব্যবসায়ীর মতো একজন খেলোয়াড়েরও আছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আমার সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করি, কারণ আমি মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, আবার যদি মাগুরা-১ আসনে নির্বাচন হয়, কেউ আমাকে হারাতে পারবে না।” এই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ছিল কিছু খেদও। সাকিব স্বীকার করেন, “আমি যেভাবে কাজ করতে চেয়েছিলাম, তা পারিনি। এটা আমি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ইচ্ছেটা ভালো ছিল।”
রাজনীতিতে তার আগমনের উদ্দেশ্য ছিল ‘সিস্টেমের ভেতর থেকে পরিবর্তন আনা’। তিনি বলেন, “আপনি যদি সিস্টেমের বাইরে থাকেন, তাহলে পরিবর্তন আনবেন কীভাবে? আমি বিশ্বাস করি, বাইরে থেকে নয়, ভেতর থেকেই পরিবর্তন সম্ভব।” এই চিন্তাধারার কারণেই তিনি রাজনীতিতে আসেন।
তবে নির্বাচন শেষে মাত্র তিন দিন তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলেন, বাকি সময়টা কেটেছে দেশের বাইরে ক্রিকেট খেলে। ফলে সংসদ সদস্য হলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকেননি। তার ভাষায়, “ছয় মাসের মতো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এরপর চার-পাঁচ মাস ক্রিকেট খেলেছি, দেশের বাইরে ছিলাম। সময়ই পাইনি পুরোপুরি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার।”
এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) তাকে রাজনীতি না করে শুধু ক্রিকেট খেলার পরামর্শ দেন। সাকিব জানান, “প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার রাজনীতি করতে হবে না, শুধু ক্রিকেট খেলো।’ আমি সেই পরামর্শই মেনে নিয়েছি।”
তবে তার পরিকল্পনা ছিল দীর্ঘমেয়াদী—চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ক্রিকেট খেলে পরে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। “আমি রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়িনি,” বলেন সাকিব। “আমি শুধু সিস্টেমের ভেতরে থাকতে চেয়েছি। মানুষ কী ভাবছে সেটা তাদের ব্যাপার। আমি কিছু নিতে আসিনি, দিতে এসেছিলাম।”
পরিবর্তনের জন্য শুধু ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “পরিবর্তন আনতে হলে চিন্তার পরিবর্তন দরকার। সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একা কেউ কিছু করতে পারবে না।”
নিজের রাজনৈতিক যাত্রা নিয়ে সমস্ত বিতর্কের মাঝেও সাকিব আল হাসান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন—তার উদ্দেশ্য ছিল ভালো, এবং সেই উদ্দেশ্যই তাকে রাজনীতিতে টেনে এনেছে।