টাইম ম্যাগাজিনের ‘বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির’ তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও সমাজপ্রতিষ্ঠানিক রূপান্তরের পথিকৃৎ মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খ্যাতনামা সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনের ‘বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির’ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। টাইমের ভাষায়, ছাত্রদের নেতৃত্বে যে গণজাগরণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে, সেই মুহূর্তে ড. ইউনূস এগিয়ে এসেছেন দেশকে একটি নতুন গণতান্ত্রিক পথ দেখাতে।

২০২৫ সালের জন্য প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনের ‘দ্য ১০০ মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল পিপল অব ২০২৫’ শীর্ষক তালিকায় ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রশংসাসূচক লেখাটি লিখেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। তিনি ড. ইউনূসকে শুধু একজন ক্ষুদ্রঋণ উদ্ভাবক হিসেবে নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনের এক প্রতীকে রূপ দিয়েছেন।

হিলারি ক্লিনটনের কলমে উঠে এসেছে ইউনূসের সেই যুগান্তকারী উদ্যোগ—গ্রামীণ ব্যাংক (Grameen Bank)। তার ভাষায়, “ড. ইউনূস কয়েক দশক আগে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন, যার লক্ষ্য ছিল সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন করা। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই উদ্যোগের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন, যাদের ৯৭ শতাংশই নারী।”

এই ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীরা নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করাতে পেরেছেন, পরিবারে টেকসই অবস্থান তৈরি করেছেন এবং নিজেদের আত্মমর্যাদা ফিরে পেয়েছেন। হিলারি ক্লিনটন স্মরণ করেন, কিভাবে আরকানসাসে তৎকালীন গভর্নর বিল ক্লিনটনের সঙ্গে ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের প্রোগ্রাম চালু করতে সহায়তা করেছিলেন। সেই সময়ই তাদের প্রথম দেখা হয়, এবং সেখান থেকেই গড়ে ওঠে দীর্ঘ বন্ধন।

তিনি বলেন, “বিশ্বজুড়ে আমার সফরের সময় আমি ইউনূসের কাজের প্রভাব দেখতে পেয়েছি—কিভাবে তার উদ্যোগে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জীবন বদলে গেছে, তারা উঠে এসেছে এবং নতুন করে বাঁচার আশা ফিরে পেয়েছে।”

টাইম ম্যাগাজিনের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি যখন এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন আবারও নিজের দেশকে সহায়তা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি এখন গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার পক্ষে দাঁড়িয়ে একটি ন্যায়সঙ্গত ও মুক্ত সমাজের ভিত্তি তৈরি করতে কাজ করছেন।

টাইম-এর এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া শুধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নয়, বরং বাংলাদেশের জন্য এক আশার বার্তাও বয়ে এনেছে—যেখানে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে একজন প্রগতিশীল কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে দৃপ্তভাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *