মুর্শিদাবাদ সহিংসতা নিয়ে ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশের উদ্বেগকে ‘ভণ্ডামি’ আর ‘অযৌক্তিক’ বলে দাবি

মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার সাম্প্রতিক সহিংসতা ঘিরে বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশ্য উদ্বেগে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of External Affairs of India) বাংলাদেশের মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘ভণ্ডামিপূর্ণ’ বলে কড়া ভাষায় নিন্দা করেছে। সেইসঙ্গে তারা বাংলাদেশকে নিজেদের দেশে সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষার প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে বলেছে।

ঘটনার সূত্রপাত পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর থানা এলাকায়, যেখানে ৪ এপ্রিল শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ৮ এপ্রিল উমরপুরে সহিংস রূপ নেয়। প্রায় ৫,০০০ বিক্ষোভকারী জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, জনতা ইট, রড, ধারালো অস্ত্র এবং আগুন বোমা দিয়ে পুলিশ ও সরকারি যানবাহনের উপর আক্রমণ চালায়।

এই সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়। বাংলাদেশের প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqul Alam) বলেন, “আমরা ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানাচ্ছি।” এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি মানবিক ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

তবে এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল (Randhir Jaiswal) বলেন, “বাংলাদেশের এই বক্তব্য মূলত একটি ছদ্মবেশী চেষ্টা, যাতে নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বাস্তবতা আড়াল করা যায়। সেখানে অপরাধীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এই বক্তব্য অনেকের কাছেই ‘whataboutism’ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে—একটি সাধারণ কূটনৈতিক কৌশল, যেখানে মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দেশের সমস্যার দিকে আঙুল তোলা হয়। ভারত যে বারবার অন্য দেশের সমালোচনাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে প্রত্যাখ্যান করে, এবার সেই ভারতই বাংলাদেশের যুক্তিসঙ্গত উদ্বেগকে ‘ভণ্ডামি’ বলেছে—এতে দ্বৈত নীতির প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বলে দাবি করেছেন এবং রাজ্যপালকে উপদ্রুত এলাকায় সফর স্থগিতের অনুরোধ জানিয়েছেন। রাজ্য সরকারের রিপোর্ট বলছে, সহিংসতার ঘটনাটি মূলত জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ থেকেই ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান বরাবরই ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের পক্ষে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সংখ্যালঘু অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তারা নীরব থাকবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের উদ্বেগ একান্তই মানবিক ও বাস্তবভিত্তিক। বরং ভারতের উচিত হবে আত্মসমালোচনার মনোভাব নিয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক মানদণ্ডে আরও দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *