নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে জামায়াতের আপত্তি, ধর্মীয় মূল্যবোধ লঙ্ঘনের অভিযোগ

নারী অধিকার ও নীতিগত সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কমিশনের সুপারিশগুলোর কয়েকটি ধর্মীয় বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং তা ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত হানে।

২০ এপ্রিল (রবিবার) রাতে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান জানান, তারা কমিশনের সুপারিশ দেখে বিস্মিত। তিনি বলেন, “দেশে নৈতিকতার অভাবে যখন নানা সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তখন ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব না দিয়ে এমন কিছু সুপারিশ করা হয়েছে, যা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।”

কমিশনের প্রতিবেদনটি ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস (Dr. Yunus)-এর কাছে জমা দেওয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (Mia Golam Porwar) এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, কমিশনের সুপারিশমালা ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটি ধর্মীয় ভারসাম্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে কমিশনের ২৫ নম্বর পৃষ্ঠায় মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিল করে নারী-পুরুষের সমান সম্পত্তির প্রস্তাবকে তিনি কোরআনের নির্দেশনার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, সুপারিশমালায় কিছু অংশে বিবাহকে নিরুৎসাহিত এবং যিনার মতো বিষয়কে ‘সহনশীল’ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এসব প্রস্তাব সমাজে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

কমিশনের ৯ম পৃষ্ঠায় অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সেটি নিয়েও আপত্তি জানানো হয়েছে জামায়াতের পক্ষ থেকে। পরওয়ার বলেন, এতে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ—সব ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের নিজ নিজ ধর্মীয় পারিবারিক বিধান থেকে বিচ্যুত করার ঝুঁকি রয়েছে।

এছাড়া, জাতিসংঘের CEDAW (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women) সনদের আওতায় পারিবারিক আইন বাস্তবায়নের প্রস্তাব নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে। জামায়াত নেতার মতে, CEDAW-এর কিছু ধারা ইসলামের নিকাহ প্রথা ও অভিভাবকত্বের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আরেকটি আপত্তি এসেছে কমিশনের পক্ষ থেকে নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকা সমানভাবে দেখার সুপারিশ নিয়ে। জামায়াত নেতারা বলছেন, ইসলাম নারী-পুরুষের মর্যাদাকে সমান মনে করলেও, দায়িত্বে পার্থক্যকে স্বীকার করে। তাই প্রস্তাবিত এই ধারা ইসলামী পারিবারিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সংগঠনটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং ‘অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত’ এসব সুপারিশ পুনর্বিবেচনা করে।

উল্লেখ্য, এর আগে জামায়াত আর এনসিপি দুইপক্ষই সংস্কার বিষয়ে মোটামুটি একই অবস্থানে থাকলেও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে এনসিপি’র অবস্থান এখনো পরিষ্কার হয়নি। নারী অধিকার, সমতা এবং আইনি সংস্কারের প্রশ্নে কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত সুপারিশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—উভয়ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *