সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের মালিকানাধীন গণমাধ্যমেরে অবস্থা জানতে তদন্ত

দেশের সংবাদপত্র শিল্পে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, সংবাদপত্রের গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে, যা প্রচারসংখ্যা যাচাই, ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন এবং বিজ্ঞাপন হার নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করবে।

সোমবার রাজধানীর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (DFP) অংশীজন সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “যে সংবাদপত্রগুলো সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করে প্রকাশিত হবে, কেবল তারাই সরকারি বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য সুবিধা পাবে।” এছাড়াও তিনি তুলে ধরেন, অনেক সাবেক মন্ত্রী ও এমপি পূর্ববর্তী সরকারে ক্ষমতার অপব্যবহার করে গণমাধ্যমের মালিক হয়েছেন। এসব গণমাধ্যমের কার্যক্রম যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

গণমাধ্যম করদাতা কি না—তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। “সরকার কোনও সংবাদপত্র বন্ধ করতে চায় না,” জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”

সভায় উপস্থিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ (Kamal Ahmed) বলেন, যেসব সংবাদপত্রে ন্যায্য প্রতিযোগিতা অনুপস্থিত, সেগুলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার যোগ্য নয়। তিনি ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্রগুলোর জন্য আলাদা নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং কোনো সংবাদপত্র বন্ধ না করার আহ্বান জানান।

চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (Department of Films and Publications) মহাপরিচালক খালেদা বেগম (Khaleda Begum) বলেন, “সংবাদপত্র নিরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। ডিএফপি যেন রাজনৈতিক বা অন্য কোনও চাপমুক্ত থেকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে, তার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, দৈনিক প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ, দৈনিক দিনকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শিমুল বিশ্বাস এবং দৈনিক নয়াদিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলীসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।

সরকারি সহায়তা পেতে সংবাদপত্রগুলোর জন্য স্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের এই পদক্ষেপকে দেশের সংবাদজগতে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মোড়’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *