জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পেছনে দলের বর্তমান নেতৃত্বের অবহেলাকেই দায়ী করছেন শহীদ নেতাদের পরিবার সদস্যরা। সম্প্রতি মীর কাশেম আলীর কন্যা তাহিরা তাসনিন বিনতে কাসেম ও সাবেক আমীর মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র মোহাম্মদ নাদিমুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।
তাহিরা তাসনিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি হওয়া মীর কাশেম আলী (Mir Quasem Ali), মতিউর রহমান নিজামী (Motiur Rahman Nizami), আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (Ali Ahsan Mohammad Mujahid), আবদুল কাদের মোল্লা (Abdul Quader Molla) এবং মো. কামারুজ্জামানদের রক্ষায় দল যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, “দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ, তারা আমাদের নেতাদের ফাঁসি ঠেকাতে গড়িমসি করেছে।”
ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম আরমান, মীর কাশেমের ছেলে, ৮ বছর ‘আয়নাঘরে’ বন্দি থাকার প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছেন তাহিরা। তিনি লিখেন, “আমাদের একমাত্র সান্ত্বনা শহিদি মর্যাদা। কিন্তু আপনজনেরা শুধু ধোকা দিয়েছে।” এছাড়াও তিনি জানান, জামায়াত তাকে এমপি হওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি সারাজীবন বলবেন—“নিজ হাতে হত্যা না করলেও বাবাদের হত্যার দায় তাদেরও আছে।”
‘ক্রাইম অব অমিশন’ বা আইনগত দায়িত্ব পালন না করাকে তিনি সরাসরি অপরাধ বলেও উল্লেখ করেছেন। এই বিষয়ে তিনি দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা ভালো থাকুন, আমার বাবাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন ভালো থাকুক।”
অন্যদিকে, মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র মোহাম্মদ নাদিমুর রহমান (Mohammad Nadimur Rahman) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “যে ছয় নেতাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, তাদের জন্য যদি দল সর্বশক্তি প্রয়োগ করত, তাহলে আজকের অবস্থা হতো না।” তিনি অভিযোগ করেন, ছোট ও বড় দুই নেতা জেলে থাকা নেতাদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন।
নাদিমুর রহমান আরো বলেন, “বর্তমান জামায়াত নেতা ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলছেন, যা স্পষ্টভাবে দলের আদর্শের পরিপন্থী।” তিনি মানবতাবিরোধী মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এটিএম আজহারুল ইসলাম (ATM Azharul Islam)-এর সুস্বাস্থ্য ও দ্রুত মুক্তি কামনা করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামীর এক প্রীতি সমাবেশে বাংলাদেশের পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মার উপস্থিতি নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েও পরে তা মুছে ফেলেন শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহীদ পরিবারের এসব ক্ষোভ-বিক্ষোভ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নেটিজেনদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, অধ্যাপক গোলাম আজম থেকে শুরু করে মতিউর রহমান নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান ও মীর কাশেম আলী—সবাই ভারতের আগ্রাসনবিরোধী অবস্থানে ছিলেন। ফলে আওয়ামী লীগ এবং দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই তাদের বিচারের নামে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
বর্তমান জামায়াত নেতৃত্বের ভারতপ্রেমের অভিযোগও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, বর্তমান জামায়াত আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি ভারতঘেঁষা হয়ে পড়েছে।