মে’র প্রথম তিন দিনে ঢাকায় বিএনপি, এনসিপি ও হেফাজতের পৃথক তিন সমাবেশ

আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা তিন দিনের সরকারি ছুটিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সময়ে রাজধানীর তিন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিনটি ভিন্নমতের দল—বিএনপি (BNP), জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party-NCP) এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ (Hefazat-e-Islam Bangladesh)—পৃথকভাবে সমাবেশের আয়োজন করেছে। ফলে একদিকে যেমন রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট করতে চায় দলগুলো, অন্যদিকে জনসমাগম, যানজট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

বিএনপির শ্রমিক সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি তারেক রহমান

ছুটির প্রথম দিন, ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে, বিএনপি নয়াপল্টনে বিকেল ২টায় আয়োজন করছে ‘শ্রমিক সমাবেশ’। আয়োজক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল-এর নেতৃত্বে এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। রাজধানীর বাইরে থেকেও নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ আশেপাশের জেলা থেকেও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

এনসিপির প্রতিবাদী সুরে রাজনৈতিক দাবি

শুক্রবার, ছুটির দ্বিতীয় দিন বিকেল ৩টায়, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমাবেশ করবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে। ঢাকা মহানগর শাখার তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিতব্য এই সমাবেশে সরকারবিরোধী তীব্র বক্তব্য আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব।

আদীব জানান, সমাবেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলের ‘গুম-খুন’ ও অন্যান্য সহিংসতার বিচার দাবি করা হবে। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর অভিযান, ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলন ও সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের’ও বিচার চাওয়া হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত ও নিবন্ধন বাতিলের দাবিও জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ ও চাপের কৌশল

ছুটির তৃতীয় দিন, শনিবার, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মহাসমাবেশ’ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। দীর্ঘ এক মাস ধরে সমাবেশের প্রস্তুতি চালিয়ে আসা সংগঠনটি মঙ্গলবার খিলগাঁওয়ের জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় আয়োজক কমিটির বৈঠক করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান।

সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য চারটি বড় দাবি ঘিরে জনমত গড়ে তোলা। নেতারা জানান, তাদের ওপর থাকা প্রায় ৩০০ মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। তারা অভিযোগ করেছেন, এসব মামলা আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
– ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর অভিযানের বিচার,
– ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে নিহতদের ঘটনায় বিচার,
– ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ‘হত্যাকাণ্ড’ তদন্ত,
– নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল,
– সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং
– ফিলিস্তিন ও ভারতের মুসলমানদের ওপর সহিংসতা বন্ধের দাবি।

হেফাজতের মতে, নির্বাচনের আগে নিজেদের সংগঠনগত শক্তি ও অবস্থান জানান দিতে এই মহাসমাবেশ একটি কৌশলগত উদ্যোগ। ছুটির দিনে সমাবেশ আয়োজন করে তারা জনদুর্ভোগ এড়াতে চাইলেও, এটি সরকার ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর একধরনের চাপও তৈরি করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *