রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এনসিপির সম্ভাবনা ও সংকট
নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি (NCP) নিয়ে নির্বাচনের সময় যত দেরি হবে, ততই তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফাহাম আব্দুস সালাম। তার মতে, নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে গেলে এনসিপির নির্বাচনী সম্ভাবনার কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন না ঘটলেও, দল গোছানোর জন্য তারা মূল্যবান সময় পাবে।
তবে ভোটের রাজনীতিতে এনসিপির ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। তার ভাষায়, “আমি মনে করি না আগামী নির্বাচনে কোনো এক্সটার্নাল এক্টর চাপ না দিলে এনসিপি কোনো আসন পাবে।” ব্যতিক্রম হতে পারেন কেবল নাহিদ (Nahid), যদি তিনি ঢাকায় থেকে নির্বাচন করেন, যদিও তাও হবে “অসম্ভব কঠিন।”
দুইটি কৌশল, দুটি বিপরীত পথ
বিশ্লেষকের মতে, এনসিপির সামনে রয়েছে দুটি কার্যকর কৌশল:
১. শিবিরের (Shibir) সাথে রাজনৈতিকভাবে একাত্ম হওয়া
২. বিএনপি (BNP)-র সাথে এলাইনড হওয়া
তবে ফাহাম আব্দুস সালাম সতর্ক করেন, শিবিরের সঙ্গে একাত্ম হলে স্বল্পমেয়াদে ভোট বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে। অন্যদিকে, বিএনপির সঙ্গে এলাইনমেন্ট এনসিপিকে সংসদে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে, যদিও এতে জাতীয় পার্টির মতো অস্তিত্বহীন দলে রূপান্তরের ঝুঁকিও রয়েছে।
দলীয় ভাঙনের শঙ্কা
নির্বাচনে পরাজয়ের পর এনসিপি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, “হারার পরদিন থেকেই দলের নেতারাই অভিযোগ তুলবেন – ফান্ডের অভাবে আমি হারেছি।” এসময় ফান্ড মিসম্যানেজমেন্টকে বড় রকমের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেন।
তিনি বলেন, অভিযোগের তীর থাকবে মূলত আসিফ (Asif), পিনাকী ভট্টাচার্য ও আরিফের দিকে। এইসব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে “সরকারের ক্লোজ আপ”-এর আশায় বসুন্ধরার ঘনিষ্ঠতায় সম্পৃক্ত থাকার।
এনসিপির গঠনগত দুর্বলতা
বিশ্লেষকের মতে, এনসিপির গঠনগত সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, এ দলে প্রায় সবাই শিক্ষিত, যাদের অনেকেই লেগওয়ার্ক না করে শুধু বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকেন। তাঁর ভাষায়, “গাড়ী নিয়ে শোডাউন করে নিজের গোমাসা নিজেই করবে। এনসিপি প্রচুর ফেসবুক করবে কিন্তু ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারবে না।”
সম্ভাব্য ‘তৃতীয় পথ’: সংরক্ষিত আসনের দাবী
ফাহাম আব্দুস সালাম ধারণা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে “জুলাই আন্দোলনের” অংশগ্রহণকারীদের জন্য নারীদের মতো সংরক্ষিত আসনের দাবী উঠতে পারে। তার মতে, এটি এখন হাস্যকর মনে হলেও ভবিষ্যতে বাস্তব সম্ভাবনায় পরিণত হতে পারে। এই দাবির মাধ্যমে এনসিপি কিংবা ছাত্র সংগঠনগুলো বিএনপির কাছ থেকে রাজনৈতিক ছাড় আদায় করার চেষ্টা করতে পারে।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক অঙ্ক
বিশ্লেষকের মতে, বিদেশীরা চাইবেন এনসিপি যেন বাংলাদেশের বিরোধী দলে পরিণত হয়, কারণ “বিএনপিকে তারা আদর্শ বিরোধী দল মনে করেন না।” তার দাবি অনুযায়ী, বিদেশী বিশ্লেষকরা এখনও মনে করেন আওয়ামী লীগ একটি “সেকুলার দল” এবং এনসিপির মতো দলকে তারা দীর্ঘমেয়াদে সমর্থন দিতে চাইবেন।
উপসংহার: ভবিষ্যৎ নির্ভর করে এলাইনমেন্টের উপর
সবশেষে ফাহাম আব্দুস সালাম মত দেন, “কোনো ধরনের কোয়ালিশানে না গেলে এনসিপির রাজনীতির কোনো ভবিষ্যৎ নাই।” তার মতে, এনসিপির রাজনৈতিক টিকে থাকার জন্য শিবির বা বিএনপির মতো শক্তির সাথে কোনো না কোনো সমঝোতায় যাওয়া একান্ত প্রয়োজন। জামায়াতকে তিনি বাস্তবিক অর্থে কোনো কার্যকর অপশন বলে মনে করেন না, কারণ জামায়াতের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এখন এনসিপিই।
— রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফাহাম আব্দুস সালামের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংকলিত