ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া হলো নারী সাংবাদিককে

বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন এক নারী সাংবাদিক। শনিবার দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলন থেকে দৈনিক যুগান্তরের মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদক মনিকা চৌধুরী (Monika Chowdhury) নামের ওই সাংবাদিককে তার নারী পরিচয়ের কারণে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে মনিকা চৌধুরী বলেন, সংবাদ সম্মেলনের খবর পেয়ে সকালেই তিনি বরিশাল প্রেসক্লাবে যান। তখনও অনুষ্ঠান শুরু হয়নি। অন্যান্য সাংবাদিকদের মতো তিনিও তার ক্যামেরা ও বুম প্রস্তুত করে ফুটেজ নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই কয়েকজন চরমোনাই অনুসারী এসে তাকে বলেন— “আপনি নারী, তাই এখানে থাকতে পারবেন না। আমাদের এখানে নারী সাংবাদিক গ্রহণযোগ্য নয়। দয়া করে বেরিয়ে যান।”

মনিকা প্রশ্ন তোলেন, “নারী সাংবাদিক কেন গ্রহণযোগ্য নয়?” উত্তরে তারা জানান, “এখানে অনেক হুজুর আছেন, তারা এটি পছন্দ করবেন না।”

এই আচরণে উপস্থিত অন্য সাংবাদিকরাও আপত্তি তুললে চরমোনাই পক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়— “নারী সাংবাদিক এখানে কিছুতেই থাকতে পারবেন না, তাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে।” এরপর মানসিক আঘাত পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মনিকা। তার ভাষায়, “আমি তো একজন পেশাদার সংবাদকর্মী। নারী, পুরুষ, ট্রান্সজেন্ডার— আমার পরিচয় সাংবাদিক। আমাকে বের করে দেওয়াটা শুধু একজন নারী হিসেবে অসম্মান নয়, এটি পুরো সাংবাদিক সমাজের জন্য অবমাননাকর।”

এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সংক্রান্ত আদালতে দায়ের হওয়া একটি মামলাকে কেন্দ্র করে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের কেউ কেউ এই নারী বিদ্বেষী আচরণের প্রতিবাদ করলে, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম (Fayzul Karim) বলেন, “আমরা ইসলামী শরিয়তের আলোকে পর্দা মেনে চলি এবং অন্যদেরও সে পথেই চলতে উৎসাহ দিই। এই কারণেই সভা থেকে ওই নারী সাংবাদিককে চলে যেতে বলা হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।”

তবে সাংবাদিক মহলে এমন আচরণকে কঠোরভাবে সমালোচনা করা হচ্ছে, বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমের পেশাদারিত্বের বিরুদ্ধে এটি একটি সরাসরি আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের মূল আলোচ্য ছিল বরিশাল সিটি নির্বাচন ঘিরে আদালতে গৃহীত মামলা। আগে চরমোনাই পীরের অনুসারীরা আদালত চত্বর ঘেরাও করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। আইনজীবীদের অনেকেই এমন সমাবেশকে আদালতের উপর চাপ প্রয়োগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

তবে শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে মুফতি ফয়জুল করিম বলেন, “সোমবার রাজপথে কোনো কর্মসূচি নয়— আমি আমার দলীয় নেতা-কর্মীদের তা জানিয়ে দিয়েছি। আদালত অবমাননার মতো কিছু আমরা চাই না।” তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা (Hasina) সরকারের পতনের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি ও চট্টগ্রাম সিটির দুই প্রার্থী আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছেন। সেই কারণেই আমরা আদালতের উপর আস্থা রেখে এগোচ্ছি।”

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন নির্বাচন প্রসঙ্গে ফয়জুল করিম জানান, সে সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন বলেই তিনি হাতপাখা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ তোলেন, “আমরা কখনো বেনামে নির্বাচনে যাইনি, যারা গেছে তারা মুনাফেকি করেছে।”

এই ঘটনার পর থেকে বরিশালের সাংবাদিক সমাজের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে, বিশেষত নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *