দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম (ATM Azharul Islam)-এর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Dr. Syed Refaat Ahmed)-এর নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
আজহারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল এবং নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগ ৬ মে শুনানির দিন ধার্য করেন। একইসঙ্গে, সর্বোচ্চ আদালত ২৬ ফেব্রুয়ারি আজহারের আপিলের অনুমতি দেন এবং আসামিপক্ষকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে নির্দেশনা দেন। বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ছিল প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা যেখানে রিভিউ থেকে মূল আপিল শুনানির সুযোগ দিল আদালত।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজহারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম রিভিউ আবেদন করেন। তবে একাধিকবার শুনানি পিছিয়ে পড়ায় শুনানি প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে সংঘটিত ব্যাপক গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অপরাধে আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিনি ১২৫৬ জনকে হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক ও নির্যাতনসহ ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন।
এই রায়কে জামায়াতে ইসলামী বরাবরই ‘প্রহসনের রায়’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছে। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জামায়াত নেতা আজহার আদালতে আপিল করেন। মূল আপিল ছিল ৯০ পৃষ্ঠার, সঙ্গে জমা হয় ২৩৪০ পৃষ্ঠার বিশাল পরিসরের নথি।
দীর্ঘ আট বছর ধরে চলে আসা এই মামলা এখন নতুন মোড়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ।