শেখ হাসিনা ভারত যাওয়ার পর একজন হিন্দুও এদেশে প্রবেশ করেনি: আসামের মুখ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অবস্থা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma)। তবে এবার তিনি যা বললেন, তা আগে ভারতীয় মিডিয়া ও কিছু রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকার পতনের পর বাংলাদেশ থেকে কোনো হিন্দুই ভারতে প্রবেশ করেনি।

তার ভাষায়, “হিন্দুরা বাংলাদেশে রয়ে গেছে এবং লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। গত এক মাসে একজন হিন্দুও ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেনি।” তবে তিনি একইসঙ্গে দাবি করেন, গত এক মাসে ৩৫ জন মুসলিম অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা আসামে নয়, বরং বেঙ্গালুরু, কোয়েম্বাটুর বা তামিলনাড়ুর মতো অঞ্চলে গার্মেন্টস খাতে কাজ করতে যাচ্ছিল।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট যে, ভারতের একটি মহল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষিতে বিভ্রান্তিকর বার্তা দিতে চাইছে। শেখ হাসিনা সরকার ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে এক ধরনের রাজনৈতিক নাটক শুরু হয়েছে ভারতের কিছু রাজ্য ও মিডিয়া হাউজে।

হাসিনা পতনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়লেও, সংখ্যালঘুদের বড় কোনো সংগঠিত হামলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিওকে অতিরঞ্জিত করে ভারতীয় মিডিয়ায় ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। অনেকক্ষেত্রে পুরনো ফুটেজ চালিয়ে ‘তথ্য বিকৃতি’র আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের কিছু রাজনৈতিক দল ও হিন্দুত্ববাদী অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ‘সাংঘাতিক হামলা’ চলছে—এমন প্রচার চালানো হলেও, বাস্তবচিত্র ভিন্ন। হিমন্ত শর্মার এই বক্তব্যেই তা আরও একবার স্পষ্ট হলো। তবুও ভারতীয় পক্ষ থেকে এখনো ‘বাংলাদেশ সরকারকে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাপ দিতে হবে’—এই ধরনের চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চলছে।

এই পরিস্থিতিকে বিশ্লেষকরা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ হিসেবেই দেখছেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বদলে জনরোষের শিকার হয়েছে মূলত ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীরা। অথচ এই প্রেক্ষাপটে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ ইস্যুকে সামনে এনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির চেষ্টা ভারতের একটি মহল শুরু করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *