তিন দফা দাবিতে উত্তাল আন্দোলনের মুখে পড়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam)। রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (Jagannath University) শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথা বলার সময় হঠাৎ একদল বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী তাঁর মাথা লক্ষ্য করে পানির বোতল ছুড়ে মারে। এরপর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, যার প্রেক্ষিতে মাহফুজ আলম ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
রাত ১০টার পর কাকরাইল মোড়ে উপস্থিত হয়ে মাহফুজ আলম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। তবে তাঁর বক্তব্য চলাকালীন সময়েই হঠাৎ অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তাঁর মাথা লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষিপ্ত হয়। এই ঘটনার পর তিনি আর একটিও শব্দ না করে স্থান ত্যাগ করেন।
প্রায় ১৫ মিনিট পর আন্দোলনকারীদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, “আজকের ঘটনায় আমি মনে করি, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী যারা অন্তর্ঘাতকারী হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলনে ঢুকে পড়ে, তারাই দায়ী। আমি কারও নাম বলব না, তবে প্রশাসন ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব এখন তাদের পরিচয় এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করা।”
মাহফুজ আলম আরও বলেন, “আট মাস ধরে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি যেভাবে এই গোষ্ঠীর হিংসা অনলাইনে প্রকাশ পায়, আজকের ঘটনাও তারই প্রকাশ। আমি শুধু সন্দেহ প্রকাশ করছি, দায়িত্ব কিন্তু মিডিয়া ও প্রশাসনের।”
তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আহ্বান জানান—“আপনাদের ন্যায্য দাবি সরকার শুনতে প্রস্তুত, কিন্তু আন্দোলনে থাকা অন্তর্ঘাতকারীদের চিনে রাখুন এবং আলাদা করুন।”
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (Asif Mahmud Sajib Bhuiyan)। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “আমরা সরকারের অংশ হিসেবে দাপ্তরিক দায়িত্ব ছাড়াও ছাত্রদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা সমাধানে সচেষ্ট থাকি। অন্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝে সেতুবন্ধনের ভূমিকা রাখতে হয়।”
অন্যদিকে, রাত ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান নেন ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, “আমরা উপদেষ্টার প্রতি বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।”
তিনি অভিযোগ করেন, উপদেষ্টার বক্তব্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে আরও বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। “আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসে, ততক্ষণ এই অবস্থান ত্যাগ করব না। যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে, তার দায় নিতে হবে সরকারকেই,” বলেন শামসুল আরেফিন।
তিনি আরও যোগ করেন, “অনেকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। আমাদের অবস্থান হবে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু কেউ যদি আবার দুপুরের মতো শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরায়, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ করব।”
আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেও উত্তেজনা কম নয়। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ভাস্কর্য চত্বর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লংমার্চ শুরু হয়। কাকরাইল মসজিদের সামনে আসতেই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে আন্দোলনকারীরা। তারা ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে অন্তত অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন বলে দাবি করা হয়।
পরে বেলা ২টার দিকে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলে আরও কয়েক শত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আটটি বাসে করে যোগ দেন আন্দোলনে। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন।
উত্তাল আন্দোলন, উত্তপ্ত ভাষ্য, আর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার এই জটিলতায় দেশের উচ্চশিক্ষা ও রাজনীতি—দুই মঞ্চেই নেমে এসেছে উদ্বেগ আর প্রশ্নের ছায়া।