বিএনপি যদি ছাড় না দেয়, তাহলে অন্তত ২৯৫টি আসনে জামানত হারাবে চিরকালের ভিলেন জামায়াত: গোলাম মোর্তজা

স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক চেতনার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বারবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন মাহফুজ আলম (Mahfuz Alam)। তার বিরুদ্ধে এখন সক্রিয় হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষার্থী প্ল্যাটফর্ম, যেটিকে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠী নতুন করে ষড়যন্ত্রে নেমেছে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা (Golam Mortoza)। তার ভাষায়, মাহফুজ আলমরা ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক, আর জামায়াত-শিবির চিরকালের ভিলেন।

গোলাম মোর্তজা তার লেখায় তুলে ধরেন, মাহফুজ আলম যখনই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কথা বলেন, তখনই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিষোদগার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরিত্রহনন এবং এমনকি হত্যার হুমকি। এই নিপীড়ন থামেনি, বরং তা আরও কৌশলী ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে এগোচ্ছে। সর্বশেষ উদাহরণ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে সামনে রেখে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা।

মোর্তজা অভিযোগ করেন, জামায়াতের পুরনো কৌশল—অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি—এই ক্ষেত্রেও অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জোট করে আন্দোলনের সময়ও তারা একই কৌশলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী স্লোগান দিয়ে মূলধারাকে বিব্রত করতো। এবারও শাহবাগে আওয়ামী লীগবিরোধী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্মকে কলুষিত করতে চেষ্টা করেছে জামায়াত-শিবির। তারা এমন সব স্লোগান দিয়েছে—যেমন ‘গোলাম আজমের বাংলাদেশে, নিজামির বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’—যা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব ও ইতিহাসকেই অস্বীকার করে।

মোর্তজা আরও লেখেন, ইতিহাসের প্রতিটি মোড়ে জামায়াত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্ষমতার কাছাকাছি গেলেই তারা দাম্ভিক হয়ে ওঠে এবং বাকিদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে সেই দাম্ভিকতা চূড়ান্ত রূপ নেয়, যার পরিণতি আজও তারা ভোগ করছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবারো পুরনো ভঙ্গিতে ফিরে এসেছে জামায়াত। এমনকি ছাত্রলীগের মধ্যে থেকেও শিবির বহু অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে ২০২৪-এর অভ্যুত্থানে জামায়াত বা শিবিরের ভূমিকাকে বড় করে দেখার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন মোর্তজা। তার ভাষায়, “মূলশক্তি তারা ছিল না, এমনকি তাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যও ছিল না।” সাধারণ শিক্ষার্থীরা জামায়াত-শিবিরের চিত্র নিয়ে এতটাই বিরক্ত ও দূরত্বে যে, তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ভাবতেও চায় না কেউ।

তবে ফ্যাসিবাদী শাসনের আড়ালে জামায়াত এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মহাশক্তিধর’ রূপে আবির্ভূত হয়েছে—এমনটাই বলছেন মোর্তজা। তাদের আসল শক্তি হচ্ছে পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা ও গালিগালাজ। এই লেখার পরও তাদের কাছ থেকে গালাগাল ও চরিত্রহননের প্রচেষ্টা আসবে বলে নিশ্চিত তিনি।

গোলাম মোর্তজা সাফ জানিয়ে দেন, বিএনপি যদি চূড়ান্তভাবে জামায়াতকে ছাড় না দেয়, তাহলে অন্তত ২৯৫টি আসনে জামানত হারাবে জামায়াত। কারণ জনগণ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে আর কখনোই ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

শেষে তিনি বলেন, মাহফুজ আলমদের দমন করা যাবে না। তারা ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের রূপকার। তাদের ওপর বোতল ছুঁড়ে, গালিগালাজ করে, এমনকি হত্যার হুমকি দিয়েও থামানো যাবে না। বরং উল্টোভাবে বললে, মনস্টার হাসিনার পতনের প্রেক্ষাপট তৈরি না করলে জামায়াত আজও গুহায় লুকিয়ে থাকতো। অথচ সেই মাহফুজ আলমদের স্যালুট জানানো উচিত ছিল জামায়াতের—যদি তারা সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক দল হতো। কিন্তু তারা হঠকারি দল, আর সেই ভুল রাজনীতির পথেই তারা এখনো চলছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *