সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ-হত্যাচেষ্টা মামলায় শফিক রেহমান খালাস

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy)–কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান (Shafik Rehman) অবশেষে আপিলের মাধ্যমে খালাস পেয়েছেন।

মঙ্গলবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ তারিক এজাজের আদালত এই বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় শফিক রেহমান নিজে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার আইনজীবী আব্দুস সালাম হিমেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো এক সময়ে বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত বিভিন্ন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা, বিশেষ করে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ একাধিক ব্যক্তি, ঢাকার পল্টন এলাকায় জাসাস কার্যালয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর ও যুক্তরাজ্যে একাধিকবার গোপন বৈঠক করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যা করার পরিকল্পনা করা।

২০১৫ সালের ৩ আগস্ট মামলাটি দায়ের করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ফজলুর রহমান। মামলার বাদী পক্ষের দাবি অনুযায়ী, অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র ছিল আন্তর্জাতিক পরিসরে সমন্বিত একটি পরিকল্পনা, যাতে অংশ নেন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা।

সাক্ষ্য, অভিযোগপত্র ও বিচারিক প্রক্রিয়া

মামলার তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়। মামলাটির বিচারে সাক্ষ্য দেন সজীব ওয়াজেদ জয়সহ মোট ১২ জন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নুর মামলার রায় ঘোষণা করেন, যেখানে শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

আপিল ও খালাসের রায়

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে গিয়ে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শফিক রেহমান ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হকের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তার জামিন মঞ্জুর করে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও সাজা স্থগিত করে দেন।

এরপর গত ২৭ এপ্রিল মামলার আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ২৭ মে রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত দিনে আজ আদালত শফিক রেহমানকে খালাস দেন, যা তার জন্য বড় এক আইনি বিজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত এই মামলায় রায়ের মাধ্যমে এক নতুন মাত্রা যোগ হলো। বিশেষ করে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা নিয়েও আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *