বাংলাদেশের লালমনিরহাট (Lalmonirhat) বিমানবন্দর পুনরায় চালুর সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রতিবেশী ভারত। বিশেষত চীনের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়ে নয়াদিল্লি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি (NDTV)। তাদের মতে, লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি ভারতের কৌশলগত ‘চিকেন নেক’ করিডরের আশপাশে থাকায় ভবিষ্যতে এটি সামরিক হুমকির উৎস হতে পারে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে থাকা লালমনিরহাট বিমানবন্দর পুনরায় চালুর পেছনে যদি চীনের প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা থাকে, তবে ভবিষ্যতে সেখানে রাডার, ফাইটার জেট বা নজরদারি ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের আশঙ্কা—বাংলাদেশ-চীন ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পরিবর্তন এসেছে। এনডিটিভির ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারান এবং নতুন সরকার চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে। যদিও এই তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত নয়, তবে ভারতীয় বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত নিজেও কৌশলগত প্রস্তুতি নিচ্ছে। ত্রিপুরার বহুদিন পরিত্যক্ত কাইলাশহর বিমানবন্দর (Kailashahar Airport) পুনরায় চালুর তোড়জোড় চলছে। একসময় এটি বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হলেও, এখন সামরিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে ভারত। এই অঞ্চলটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ বিষয়টিকে পুরোপুরি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। ২৬ মে বিকেলে ঢাকায় সেনাসদরে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্স অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা (Nazim-ul-Doula) জানান, দেশের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে লালমনিরহাট বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমরা একটি আধুনিক ও কার্যকর বিমানবন্দর গড়ে তুলছি, যার সঙ্গে এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ উদ্যোগ পুরোপুরি এভিয়েশন খাতের সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।” ব্রিগেডিয়ার দৌলার বক্তব্য অনুযায়ী, এটি শুধুমাত্র বেসামরিক নয়, দেশের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অংশ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, শুধু লালমনিরহাট নয়, বাংলাদেশে বর্তমানে সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর পুনরায় সচল করার পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সৈয়দপুর, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁওসহ আরও কয়েকটি। এসব উদ্যোগ জাতীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংযোগ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন কৌশলগত সমীকরণে লালমনিরহাট বিমানবন্দর একপ্রকার প্রতীক হয়ে উঠেছে—যেখানে পরস্পরবিরোধী আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা, সন্দেহ এবং প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নতুন মাত্রা পাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার একে অভ্যন্তরীণ উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে, তবুও এ নিয়ে আঞ্চলিক উদ্বেগ কমছে না।