বিচার প্রতিশোধ নয়, ইতিহাস থেকে শিক্ষা—শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে চিফ প্রসিকিউটরের ঘোষণা

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-এর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal)। ১৩৪ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এই অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চের সামনে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (Mohammad Tajul Islam)। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এ বিচার অতীতের প্রতিশোধ নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিজ্ঞা।”

রোববার, ১ জুন, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে মামলার ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়। এই প্রক্রিয়া বিটিভির মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের অনুমোদনক্রমে সরাসরি সম্প্রচারও করা হচ্ছে, যা দেশের বিচার ইতিহাসে এক অনন্য নজির হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এর আগের দিন, ৩১ মে, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করব। এমন কোনো ফাঁক থাকবে না যাতে কেউ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপরই ১৪ আগস্ট তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ দায়ের হয়। ১৪ অক্টোবর শুরু হওয়া তদন্ত ১২ মে শেষ হয়। ছয় মাস ২৮ দিনের তদন্ত শেষে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে যে নিষ্ঠুরতা চালিয়েছিল, তার জেরেই এই বিচার প্রক্রিয়া। আন্দোলনের সময় নির্বিচারে চালানো দমনপীড়নে প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। জনরোষে পতনের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে এবং গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে।

ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠিত কাঠামোয় প্রথম যে মামলাটি হয়, সেটিই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। মামলার পরবর্তী ধাপে যুক্ত হন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal) এবং গণঅভ্যুত্থানের সময়কার আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)।

বর্তমানে রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিচারপ্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য হওয়া এই মামলার অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মহলেও নজর কাড়ছে। এ বিচার কেবল অতীতের জবাব নয়, বরং একটি ভবিষ্যত-নির্মাণের সংকল্প বলেই তুলে ধরেছেন প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *