মায়ের মৃত্যুর খবরে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেছিলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান। কিন্তু প্রশাসন থেকে সেই আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে। ফলে সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে দূর থেকে শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখানো হয় তাঁকে—একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে মৃতদেহ এনে।
সোমবার বিকেলে মারা যান আসাদুজ্জামানের মা সালেহা বেগম। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মৃত্যুর পরপরই তাঁর বড় ছেলে আসাদুজ্জামানের প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। কিন্তু কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শাহ আলম খান বলেন, “সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান প্যারোলে মুক্তি পাননি। তবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁকে দূর থেকে মায়ের মরদেহ দেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”
প্যারোলের অনুমতির বিষয়ে জানতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার (Afia Akhter)-এর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মির্জা ইমাম উদ্দিন (Mirza Imam Uddin) বলেন, “এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।” তবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে কুলসুম (Umme Kulsum)-এর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনিও কল ধরেননি।
আসাদুজ্জামান (Asaduzzaman) বর্তমানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। তিনি ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আসাদুজ্জামান রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সাত ভাই–বোনের মধ্যে পাঁচ ভাই সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে সরকারের পতনের পর থেকে তাঁরা আত্মগোপনে রয়েছেন। এই চার ভাইও মায়ের মৃত্যুর পর বাড়িতে আসেননি।
শুধু এসেছিলেন তৃতীয় ছেলে আক্তারুজ্জামান, যিনি কোনো রাজনৈতিক দলে জড়িত নন এবং প্রাইভেট কার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনিই মায়ের মৃত্যুর পর বিকেলে বাড়িতে গিয়ে মৃতদেহ দেখেন, তবে জানাজায় অংশ নিতে পারেননি নিরাপত্তার ঝুঁকিতে।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় রাজশাহী নগরের মহিষবাথান গোরস্থানের পাশে সালেহা বেগমের দাফন সম্পন্ন হয়।