বাংলাদেশের হয়ে মোদিকেই অভিশাপ দিচ্ছে ভারতীয়রাই!

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্ত সরাসরি বিপর্যয় ডেকে এনেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে। আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের মতো রাজ্যগুলো, যাদের অর্থনীতি অনেকাংশেই বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল, এখন রীতিমতো অর্থনৈতিক ধসের মুখে।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ১৩টি স্থলবন্দর ও ৪টি জলপথের অধিকাংশই এই অঞ্চলগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর এসব পথে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিনিময় হতো, যা এখন কার্যত বন্ধ। সীমান্ত বাণিজ্যের স্থবিরতা সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ছোট ব্যবসায়ী ও পরিবহন খাতে। আসামে প্রায় ৩৫০০ আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, আর অন্তত ১০,০০০ মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।

অবস্থা এতটাই করুণ যে, করিমগঞ্জ সীমান্তে ২১ দিন ধরে আটকে থাকা ট্রাকচালক সলিমউদ্দিন আত্মহত্যা করেছেন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা সীমান্ত অঞ্চলে শুধু শোকই নয়, তীব্র ক্ষোভও সৃষ্টি করেছে। রাজ্যজুড়ে এখন একটাই সুর, “বাংলাদেশ আমাদের শত্রু নয়, শত্রু তারা যারা আমাদের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়।”

এই ক্ষোভ কেবল সাধারণ মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনেও বিষয়টি বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। প্রার্থীরা খোলাখুলিই বলছেন—বাংলাদেশের সঙ্গে সহনশীল ও স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রয়োজন।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ধারণা ছিল, সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ করে বাংলাদেশকে চাপের মুখে রাখা যাবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই চিকিৎসা ভিসা স্থগিত, আকস্মিক রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এবং সীমান্ত বাণিজ্য পথগুলো বন্ধের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিকল্প পথ তৈরি করে ফেলেছে। চীন, তুরস্ক, মালয়েশিয়া এবং পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে ঢাকা। এমনকি চীন–বাংলাদেশ অর্থনৈতিক করিডর এখন গোয়েন্দা মহলেও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

ক্রাইস্ট ইউনিভার্সিটি (Christ University)-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শিয়া উপাধ্যায় (Dr. Shreya Upadhyay) তার এক গবেষণায় বলেন, “বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে নয়, সম্মান ও সংলাপের মাধ্যমে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে রাখা ভারতের স্বার্থেই জরুরি।”

এমনকি ভারতেরই একটি অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে, “মোদি সরকারের (Modi Government) বাংলাদেশ বিষয়ক বর্তমান নীতি দেশে সামাজিক বিদ্রোহের বীজ বপন করছে।”

যেখানে দিল্লি রাজনৈতিক কৌশলের নামে প্রতিবেশীকে কোণঠাসা করতে চায়, সেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাধারণ মানুষ বলছে ঠিক উল্টো কথা—তাদের আস্থা আছে বাংলাদেশের ওপর, ক্ষোভটা বরং কেন্দ্রের দিকেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *