বর্তমান সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘বৈষম্যহীন’ বলে উপস্থাপন করলেও, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল (Masud Kamal) এই দাবিকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এটি আসলে পুরনো ‘লুটপাটের বাজেট’-এরই পুনরাবৃত্তি, যেখানে শুধু সংখ্যাগত কিছু পরিবর্তন এসেছে, নীতিগতভাবে কিছুই পাল্টায়নি।
মাসুদ কামাল বলেন, “আওয়ামী লীগ আমলে বাজেটগুলো নিয়ে বলা হতো, এগুলো লুটপাটের বাজেট। সালেহউদ্দিন সাহেব, আহসান এইচ মনসুর সাহেব এই বাজেটগুলো নিয়ে বহুবার সমালোচনা করেছেন। এবারও যে বাজেট এসেছে, তা তাদের আমলের বাজেটেরই ফরমেটে তৈরি—শুধু এক-দুইটা সংখ্যা বদলেছে।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই বাজেট যদি ‘বৈষম্যহীন’ হয়, তাহলে করমুক্ত আয়ের সীমা সাধারণ নাগরিকের জন্য ৩ লাখ টাকা আর ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ জন্য ৫ লাখ টাকা কেন? “তাহলে এটা কি বৈষম্য নয়?”—উল্টো প্রশ্ন মাসুদ কামালের।
তিনি আরও বলেন, “জুলাই যোদ্ধা কারা? ১০ মাস হয়ে গেলো, এখনো সরকার বলতে পারছে না জুলাইয়ের আন্দোলনে কয়জন মারা গেছেন, সেই তালিকাই প্রস্তুত করতে পারেনি। তাহলে আপনি কাকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ বলবেন?”
তার মতে, “রাজপথে যারা মিছিল করেছে, তারা সবাই ‘জুলাই যোদ্ধা’। তখন গৃহবধূ থেকে শুরু করে শিশুরাও মিছিলে নেমেছিল। জনগণের ক্ষোভ, বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল সেটা। এখন আপনি সেই আন্দোলনের মানুষদের আলাদা করে সুবিধা দিবেন, অথচ কে কোন ভূমিকায় ছিল সেটা নিজেই জানেন না।”
তিনি অভিযোগ করেন, “এটা একধরনের ধান্দাবাজি, ঠিক যেমনটা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। বৈষম্যহীন বাজেটের নামে বৈষম্যের নতুন সংস্করণ উপস্থাপন করা হয়েছে।”
কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। “আওয়ামী লীগের আমলেও লুটপাট হতো, তবে তারা কিছুটা হলেও এটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতো। এখনো সেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তাহলে লুটপাট কারা করছে?”
তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, “এটা কি কতিপয় এপিএস (সহকারী ব্যক্তিগত সচিব) ও উপদেষ্টাদের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে? এর উদ্দেশ্য কী? জনগণের প্রশ্নের জবাব কোথায়?”
মাসুদ কামালের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি এই বাজেটকে একটি বিভাজনমূলক ও সুযোগসন্ধানী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখছেন, যা আগের সরকারের সমালোচিত পন্থারই ধারাবাহিকতা বহন করছে।