গাজীপুরের শ্রীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party – NCP) নেতা পরিচয় দিয়ে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির মধ্য থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা আদায়ের পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে এনসিপির স্থানীয় নেতারা দাবি করেছেন, অভিযুক্তরা তাদের দলের কেউ নন।
অপহৃত ব্যক্তি হলেন আল রিয়াদ আদনান অন্তর, যিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এবং শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এ বিষয়ে বুধবার (৫ জুন) দুপুরে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তার স্ত্রী ইসরাত হাজান আঁখি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল বারিক।
অপহরণ নাটকের শুরু ২৮ মে রাত ৯টার দিকে, শ্রীপুর পৌর শহরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায়। সেখানকার মালেক মাস্টার মার্কেট থেকে মেয়ের ওষুধ কিনে বাসায় ফেরার পথে অভিযুক্ত পাঁচ যুবক তার অটোরিকশার পথরোধ করে। নিজেদের এনসিপি নেতা পরিচয় দিয়ে তাকে টেনে-হিঁচড়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায় তারা, যেখানে অন্তরকে হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
অভিযুক্তরা হলেন— উজ্বল হোসাইন (২২), আলিফ মোড়ল (২০), কাইফাত মোড়ল (২৪), মারুফ খান (২২) এবং মিঠুন (২০)। তাদের একজন, আলিফ মোড়ল, অপহরণের ঘটনায় নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দায় স্বীকার করেছেন। সেখানে তিনি জানান, মুক্তিপণের ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দুই দফায় নিয়ে গেছেন এবং ১০ হাজার টাকা ভাগ পেয়েছেন।
অপহরণের ভিডিও ফুটেজ ও অডিও রেকর্ডিং রয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরাত হাজান আঁখি। তিনি জানান, ঘটনার পর ২৯ মে ভোররাতে এমসি বাজার এলাকায় প্রথমে ২ লাখ টাকা এবং পরবর্তীতে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে এক নির্জন স্থানে অন্তরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ নিয়ে স্থানীয় এনসিপি নেতাদের কাছে অভিযোগ জানালে তারা দ্রুত ফেসবুক পেজে বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট করেন, অভিযুক্তরা তাদের দলের কেউ নয়। এনসিপি শ্রীপুর উপজেলার আহ্বায়ক প্রার্থী আবু রায়হান মেজবাহ বলেন, ‘মিছিলের সামনে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করলেই কেউ নেতা হয়ে যায় না। অভিযুক্তরা মূলত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।’
ওসি আবদুল বারিক জানান, ‘ভুক্তভোগীর স্ত্রী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, তবে ভিকটিম এবং বাদীর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি। তদন্ত চলছে।’
ঘটনার ভয়াবহতা ও সামাজিক প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার এবং অভিযুক্তদের কিশোর গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করায় তদন্ত এখন নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে।