অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) এবং বিএনপি (BNP)-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)-এর মধ্যে বহু প্রত্যাশিত বৈঠক শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে। শুক্রবার সকালে স্থানীয় সময় ৯টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) ডরচেস্টার হোটেলে শুরু হওয়া এই বৈঠককে ঘিরে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন প্রথম আলো-কে বৈঠক শুরুর খবর নিশ্চিত করেছেন। প্রেক্ষাপটে রয়েছে গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সৃষ্ট রাজনৈতিক পালাবদল, যার পর এই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছেন নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা।
নির্বাচনের সময় নির্ধারণে মতপার্থক্য
বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর একটি হলো আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ। প্রধান উপদেষ্টা ঈদুল আজহার প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে বিএনপি সেই সময়কে প্রশ্নবিদ্ধ মনে করছে। রমজান ও ঈদের আগে প্রচণ্ড গরম, ঝড়বৃষ্টি এবং রোজার কারণে নির্বাচন আয়োজনের বাস্তবতা নিয়ে দলটির নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বৈঠকে এই সময়সীমা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাতে। দলটি ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের দাবিতে কিছুটা নমনীয়তা দেখাতে পারে, যদি সরকারও নমনীয় হয়। তবে এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তে সরকার অনড় থাকলে বিএনপির জন্য তা মেনে নেওয়া কঠিন হবে।
বিতর্কিত উপদেষ্টা ও স্বৈরাচারী প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ
বিএনপি নেতারা বৈঠকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলতে পারেন—সরকারের বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ। অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ঘিরে বিএনপি এর আগেও আপত্তি জানিয়েছে। তারা মনে করেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে হলে এই উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দেওয়া জরুরি।
আরেকটি বিষয় যা আলোচনায় আসতে পারে তা হলো পূর্বের আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী আমলা ও কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। বিএনপি বিশ্বাস করে, এদের উপস্থিতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ব্যাহত করতে পারে।
সংস্কার নিয়ে সম্ভাব্য আলোচনা
সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান অপেক্ষমাণ। দলটির নেতারা জানান, যদি প্রধান উপদেষ্টার দিক থেকে কোনো সংস্কার-সংক্রান্ত প্রস্তাব আসে, তবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা তারেক রহমানকে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party – NCP)-র নেতারা মনে করছেন, বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার ও জুলাইয়ে সহিংসতায় নিহতদের বিচার।
একটি মোড় পরিবর্তনের বার্তা?
সার্বিকভাবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক শুধু দুই নেতার মুখোমুখি হওয়া নয়—এটি আগামী নির্বাচনের রূপরেখা নির্ধারণ, সরকারের গ্রহণযোগ্যতা এবং বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দিকেও একটি সম্ভাব্য মোড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে।
বৈঠক শেষে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মিডিয়ার সামনে ব্রিফ করতে পারেন বলেও জানা গেছে।