ক্ষমতায় গেলে আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশ বানাতে চাই: সরাসরি ঘোষণা ফয়জুল করীমের

ক্ষমতায় গেলে আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশ বানাতে চাই: ফয়জুল করীম”—এমনই স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (Mufti Syed Muhammad Faizul Karim), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন টকশো ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’-এ অংশ নিয়ে তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করবে তাঁর দল।

টকশো সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন তাকে প্রশ্ন করেন, “বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভেতরে কি শরিয়ার আদর্শ খুঁজে পাওয়া যায়?” এর জবাবে ফয়জুল করীম বলেন, “আমাদের শরিয়া, আমাদের দর্শন—সবই কোরআন ও হাদিসে দেওয়া আছে। এখনকার রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে এমন কিছু দেখা যায় না। তবে আফগানিস্তানে শরিয়া অনেক বেশি অনুসরণ করা হচ্ছে।”

খালেদ মুহিউদ্দীন এরপর জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কি আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশ বানাতে চান?”—তাতে তিনি সরাসরি উত্তর দেন, “হ্যাঁ, বানাতে চাই।

ইরান, আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার শাসনব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেন ফয়জুল করীম। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, এসব দেশের যে সকল দৃষ্টিভঙ্গি শরিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে—সেগুলো প্রয়োজনে গ্রহণ করা হতে পারে। তিনি বলেন, “ইরানের ভালো কিছু থাকলে গ্রহণ করবো। আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেও তাই। তবে যেটা ইসলামবিরোধী নয়, সেটাই কেবল বিবেচনায় আসবে।”

সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, “আমরা ক্ষমতায় গেলে যে শরিয়া আইন চালু করবো সেখানে হিন্দুদের অধিকারও নিশ্চিত করা হবে। সংখ্যালঘুদের অধিকার বাস্তবায়ন করাই হবে ন্যায্যতা।”

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) নিউইয়র্ক সময় দুপুর ১১টা ও বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ টকশোটি। সেখানে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন, শরিয়া ও সমঝোতা রাজনীতি নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দেন ইসলামী আন্দোলনের এই শীর্ষ নেতা।

পুরনো শত্রু, নতুন সমঝোতা?

রাজধানীর একটি বড় মঞ্চে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে হাজির হন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একাধিক নেতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এতে ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতের মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতার আভাস মিলছে। যদিও উভয় দলের মধ্যকার ধর্মীয় মতপার্থক্য এবং পারস্পরিক কটাক্ষের ইতিহাস সুপরিচিত।

সামাজিক মাধ্যমে এখন আবার ঘুরে বেড়াচ্ছে ফয়জুল করীমের বছর পাঁচেক আগের সেই বক্তব্য—”ইসলাম ধ্বংস করতে জামায়াতই যথেষ্ট”। এমন একটি প্রসঙ্গ টেনে খালেদ মুহিউদ্দীন প্রশ্ন করেন, এই পুরনো বক্তব্য তিনি প্রত্যাহার করবেন কি না? উত্তরে ফয়জুল করীম বলেন, “কোনো একটি বিষয়ে ঐকমত্য হলে একই মঞ্চে আসা যায়। তবে আমি জামায়াত নিয়ে পুরনো বক্তব্য থেকে একচুলও সরিনি। তেমনি জামায়াত নেতারাও আমাদের বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্য থেকে সরে আসেনি।”

মহাসমাবেশে জামায়াত ছাড়াও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (NCP), গণঅধিকার পরিষদ (Gonodhikar Parishad) ও আরও কিছু দলের নেতারা অংশ নেন। কিন্তু বিএনপি ছিল অনুপস্থিত। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ফয়জুল করীম জানান, “যেসব দল পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) সিস্টেম সমর্থন করে, কেবল তাদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিএনপি এই প্রক্রিয়ার পক্ষে নয় বলে তাদের ডাকিনি। তবে তারা আগ্রহ দেখালে সামনে তাদেরও দাওয়াত দেওয়া হবে।”

বিএনপি নিয়ে ক্ষোভের কারণ

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি (BNP) নিয়ে একাধিকবার কঠোর সমালোচনা করেছেন ফয়জুল করীম। এ নিয়ে ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষিপ্ত নই। তবে জনগণ ক্ষিপ্ত। চাঁদাবাজি, দলীয় কোন্দল, মারামারি, কাটাকাটি দেখে জনগণ হতাশ। আমি কেবল তাদের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলছি।”

মাজার ভাঙা নয়, বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনার আহ্বান

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কথিত ‘তৌহিদি জনতা’র হাতে শতাধিক মাজার ভাঙার ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ফয়জুল করীম। তিনি বলেন, “মাজার নিজে কোনো খারাপ কিছু নয়। কেউ যদি সেখানে সেজদা দেয়, তাকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। জোর করে ভাঙা উচিত নয়।” তার আহ্বান—সকলকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *