বিএনপির সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিপূর্ণ চিঠি এখন অভিশাপে রূপ নিয়েছে—এই মন্তব্য করেই রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ালেন নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur)। শুক্রবার (১৩ জুন) বিকেলে পটুয়াখালীর (Patuakhali) গলাচিপা উপজেলা গেস্ট হাউসের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এই ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা নেতা।
নুর বলেন, “বিএনপি (BNP) আমাদের প্রতি আশীর্বাদ নয়, বরং অভিশাপ হয়ে উঠেছে। তারা আমাদের সঙ্গে সহযোগিতার বদলে হামলা-মামলার আবহ তৈরি করেছে।”
বিশেষ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মামুন (Hasan Mamun)-এর বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তোলেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি। তার দাবি, হাসান মামুনের উসকানিতে গলাচিপা এলাকায় তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়, যা ন্যক্কারজনক ও পূর্বপরিকল্পিত ছিল।
বিএনপির দিকে ক্ষোভের তীর
সংবাদ সম্মেলনে নুর স্পষ্টভাবে বলেন, “এই অভিশপ্ত চিঠি আমাদের জন্য দুঃসহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এতে শুধু রাজনৈতিক সম্পর্কেই ফাটল ধরেনি, এলাকাজুড়ে আতঙ্কও ছড়িয়েছে। সহযোগিতা নয়, বিএনপি আমাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।”
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি এই ধরনের নেতাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে সাধারণ মানুষ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।”
এখনো কোনো জোট নয়, ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসন ঠেকানোর ডাক
ভিপি নুর এসময় আরও জানান, এখন পর্যন্ত গণঅধিকার পরিষদ কোনো রাজনৈতিক জোটে অংশ নেয়নি। “আমরা চাই না গণঅভ্যুত্থানের পর আরেকটি ফ্যাসিবাদী দল ক্ষমতায় আসুক,”—বলে জনমনে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
অতীতের হামলার প্রসঙ্গ টেনে এনেও ক্ষোভ
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার ঘটনার উদাহরণ টেনে নুর বলেন, “তখন ডাকসু নির্বাচনে আমাকে হামলার শিকার হতে হয়েছিল। এমনকি আমার নামে চুরির মামলা দেওয়া হয়েছিল। আজ আবার একই কায়দায় গণঅধিকার নেতাকর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে।”
নাটকীয় রাত্রি: অবরুদ্ধ, উদ্ধার, আতঙ্ক
গলাচিপায় নুরের আগমন ঘিরে উত্তেজনা এতটাই চরমে পৌঁছে যে, বৃহস্পতিবার রাতেই চরবিশ্বাস ইউনিয়নে বিএনপি ও গণঅধিকার নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাঙচুর ঘটে।
রাত গভীর হলে বকুলবাড়িয়া এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা ভিপি নুরকে দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এসে তাকে উদ্ধার করে গলাচিপা গেস্ট হাউসে পৌঁছে দেয়।
সংগঠনের পাশে নেতাকর্মীরা
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম সিকদার, বরিশাল মহানগর ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আবু নাঈমসহ গণঅধিকার ও অঙ্গ সংগঠনের বহু নেতাকর্মী।
এতদিন যেসব ইস্যুতে বিএনপি ও গণঅধিকার কাছাকাছি এসেছিল, সেই সম্ভাবনা যেন আজকের বাস্তবতায় মুছে যাচ্ছে। নুরুল হক নুরের বক্তব্য স্পষ্ট—রাজনৈতিক শুভেচ্ছার চিঠি এখন বিভাজনের কারণ।