এক সময়ের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, আদালতের রিটে দ্বন্দ্বের সঙ্গী, আর এখন কাশিমপুর কারাগারের কৃত্রিম ফুটবল মাঠে একসঙ্গে খেলোয়াড়—ব্যারিস্টার সুমন (Barrister Sumon) ও সালাম মুর্শেদী (Salam Murshedy) যেন জীবনের নাটকীয় এক পর্বে মুখোমুখি।
গত ৫ আগস্ট থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যা মামলায় এ দুজনই আটক। বর্তমানে তারা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২-এ ভিআইপি বন্দি হিসেবে অবস্থান করছেন। আর সেখানেই প্রতিদিন আসরের নামাজের পর নিয়মিত ফুটবল খেলেন একে অপরের বিপক্ষে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারে বন্দিদের জন্য শরীরচর্চা ও খেলাধুলার সুযোগ রাখা হয়। প্রতিদিন বিকেল কিংবা সকালে, কারাবন্দিরা যার যার মতো করে খেলাধুলা করতে পারেন। তবে ব্যারিস্টার সুমন ও সালাম মুর্শেদীর মধ্যে সম্পর্কটা কেবল শরীরচর্চায় সীমাবদ্ধ নয়—তাদের মধ্যে রয়েছে অতীতের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বও।
সালাম মুর্শেদীর গুলশানের একটি বাড়ি নিয়ে রিট করেছিলেন ব্যারিস্টার সুমন, যা নিয়ে দু’জনের সম্পর্ক ছিল বেশ তিক্ত। এছাড়া, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন ও দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন সুমন, যেখানে সালাম মুর্শেদী ছিলেন বাফুফের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফুটবল প্রশাসনের এই দ্বন্দ্ব দুইজনকে বিরোধী প্রতিপক্ষ বানিয়েছিল দীর্ঘদিন।
তবে কাশিমপুরের মাঠে এখন ভিন্ন এক দৃশ্য। দুই দলে ভাগ হয়ে নিয়মিত ফুটবল খেলেন তারা। তবে এই খেলা নিছক খেলা নয়—মাঠেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছেই। কারা সূত্র জানায়, খেলার সময় প্রায়ই একজন আরেকজনের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে জড়ান। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাউল করাও বাদ যায় না।
একবার খেলার সময় সালাম মুর্শেদী ব্যারিস্টার সুমনের পায়ে বেশ জোরে ফাউল করেন। প্রতিক্রিয়ায় সুমন হেসে বলেন, “বুড়ো বয়সে পা নিয়ে সাবধানে ফাউল করেন। না হলে হাড় ভেঙে যাবে।” কথায় হালকা রসিকতা থাকলেও, অতীতের টানাপোড়েন যেন লুকিয়ে থাকে প্রতিটি মুভে।
একসময় রাজপথে, আদালতে ও ফুটবল প্রশাসনে মুখোমুখি থাকা এই দুই ব্যক্তি এখন খেলাধুলার মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে অদ্ভুত এক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এটি কেবল কারাগারের একটি খেলার গল্প নয়, বরং দুই ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের এক অদ্ভুত সহাবস্থানের প্রতিচ্ছবি।