যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম (Saida Muna Tasneem) ও তার স্বামী, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী (Touhidul Islam Chowdhury)-এর বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকার বিদেশে পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক – Anti-Corruption Commission)।
আজ ১৬ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, “সাঈদা মুনা ও তৌহিদুল ইসলাম একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে ‘জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড’ ছাড়াও আরও ১২টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ভুয়া সংগঠনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সেই অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করা হয়।”
দুদক চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে, অভিযুক্তরা যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এসব ঋণ নিয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে ইউসিবিএল, ব্যাংক এশিয়া, ইবিএল, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এনবিএল, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
দুদক জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় তারা একাধিক ভুয়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নানা অজুহাতে ঋণ গ্রহণ করতেন। এসব প্রতিষ্ঠান কাগজে-কলমে থাকলেও প্রকৃত কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।
প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও কার্যক্রমের প্রকৃতি যাচাই করতে ইতোমধ্যে দুদকের একটি বিশেষ টিম মাঠে নেমেছে। অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের ধরণ ও পরিমাণ নির্ধারণে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
দুদক চেয়ারম্যান আরও জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ অন্যান্য ফৌজদারি ধারায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত সাঈদা মুনা তাসনিম ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি থাইল্যান্ড ও নেপালেও কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন। তার স্বামী তৌহিদুল ইসলাম দেশের বেসরকারি খাতে একজন পরিচিত উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তবে এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর, সরকারি মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বিশেষ করে, কূটনৈতিক পদে থেকে এমন আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সাধারণ মানুষের আস্থায় চরম আঘাত হেনেছে।
দুদক বলছে, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য যথেষ্ট ‘চাঞ্চল্যকর’ এবং প্রমাণ মেললে এ মামলায় আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।