জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক (Volker Türk) কি ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে উঠেছেন— এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক ও সাংবাদিক জিল্লুর রহমান। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় তিনি জাতিসংঘের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও অবস্থান ঘিরে একটি বয়ান তুলে ধরেন, যেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে জাতিসংঘের ভূমিকার সুনির্দিষ্ট সমালোচনাও উঠে আসে।
ভিডিওতে জিল্লুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে এখন একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, আপনি কিছু বললেই আপনাকে ভারতের দালাল বলা হয়, নয়তো স্বৈরাচারের দোসর। অথচ আমরা বহু বছর ধরে বলে আসছি— বিচার যেন বিচার বিভাগের হাতে থাকে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক, জবাবদিহিতা থাকুক। কিন্তু এই কথাগুলো শেখ হাসিনা সরকার কখনোই গুরুত্ব দেয়নি।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরও যারা শাসন ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা এখনো সেই একই মানসিকতা বহন করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জিল্লুর রহমানের মতে, এই গোষ্ঠী সমালোচনা সহ্য করতে পারে না, এবং সেই ধারাবাহিকতায় এখন জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের দিকেও সন্দেহের চোখে তাকানো হচ্ছে।
“ভলকার তুর্ক সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত তিনি সমর্থন করেন না,”—বলেন জিল্লুর রহমান। এরপর প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “তাহলে কি তাকেও আওয়ামী লীগের দোসর বলা হবে? ভারতের দালাল বলা হবে?”
জিল্লুর রহমান এও মনে করিয়ে দেন যে, শেখ হাসিনার শাসনামলে যখন দেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বারবার ঘটেছে, তখন ভলকার তুর্ক সেই সময়ও সরব ছিলেন। “তিনি তখন সরকারের বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন। প্রচুর বক্তব্য দিয়েছেন, যা সরকার পছন্দ করেনি,”—যোগ করেন তিনি।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি যেসব রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, সেগুলোতেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট ও উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেন জিল্লুর রহমান। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড বিষয়ে জাতিসংঘ যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তা বাংলাদেশের কোনো পক্ষ এখনো নিশ্চিতভাবে অস্বীকার করতে পারেনি।
“এই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা যদি বিশ্বমানের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কথা বলি, তবে সেই মানদণ্ডেই আমাদের বিচার করতে হবে,”—বলেই উপসংহারে প্রশ্ন রাখেন, “তাহলে এখন আপনি বলবেন কি, ভলকার তুর্ক আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করছেন?”
তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে—দেশের রাজনৈতিক পরিসরে ভিন্নমত কতটা দুরূহ হয়ে উঠেছে, আর আন্তর্জাতিক মহলের অবস্থান নিয়েও কী ধরনের দোদুল্যমানতা কাজ করছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মনস্তত্ত্বে।