রাজধানীর পুরান ঢাকায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা মো. শাওন ওরফে শাওন মুফতির মৃত্যুর প্রায় দশ মাস পর দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় এক মৃত আওয়ামী লীগ নেতা আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শাওন। মামলাটি দায়ের করা হয় ২০২৫ সালের ২৮ মে, যেখানে ৫৭ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আকবর বাবলা (Jamal Uddin Akbar Babla)। অথচ বাবলা এই ঘটনার সাড়ে চার মাস আগেই, ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
স্থানীয় সূত্র বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শাওন। তবে মামলার এজাহারে দাবি করা হয়েছে, সেদিন রাত ১১টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে’ অংশ নেওয়ার সময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং সহযোগী ‘সন্ত্রাসীরা’ তাকে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু তার মৃত্যুর সনদে গুলির কোনো উল্লেখ নেই।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন শিকদার (Md. Yasin Shikder) জানান, শাওনের নাম প্রজ্ঞাপনে শহীদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে এবং যেকোনো অসংগতি তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।
শাওনের মা মাকসুদা বেগম জানান, তিনি নিজে মামলা করতে চাননি, তবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা মামলা করতে উৎসাহিত করেন এবং তাকে আশ্বস্ত করেন যে পুলিশই বাদী হবে। তিনি শুধু একটি কাগজে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে তিনজনের নাম উল্লেখ করেন—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের এবং স্থানীয় আয়না বিক্রেতা মো. শাহজালাল। তবে মামলায় শাহজালালের নাম নেই এবং তিনি বাকি কারো নাম চেনেন না বলে দাবি করেন।
মাকসুদা বেগম আরও বলেন, ছেলে শাওনের লাশ মিটফোর্ড হাসপাতালে পান ৬ আগস্ট সকালে। শাওনের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি এবং গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পূর্ব দরিয়াপুরে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
মামলায় আসামি করা জামাল উদ্দিন আকবর বাবলার ভাগনে হুমায়ুন কবির জানান, বাবলা ওপেন হার্ট সার্জারির পর কলকাতায় মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ শোক প্রকাশও করে।
এদিকে শাওনের বোন মারিয়া আক্তার দাবি করেন, শাওন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল না। হয়তো এলাকার কোনো মিছিলে অংশ নিয়েছিল। তবে পরিবারের ধারণা, সে নিয়মিত ছাত্রলীগ করত না। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর অনুমোদিত ইউনিট কমিটিতে ছাত্রলীগ (Bangladesh Chhatra League)-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তার নাম ছিল। সংগঠনের একাধিক নেতা তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন এবং একটি মিছিলের ছবিতে তাকে ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও সমাজ–অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক (Dr. Towhidul Haque) মনে করেন, এই ধরনের মামলায় ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তিনি বলেন, “প্রকৃত ঘটনা একরকম, মামলায় বর্ণনা ভিন্ন এবং পরিবারের বক্তব্য আরেকরকম—এমন হলে বিচারপ্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে।”
তার মতে, রাজনৈতিক চাপ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা আইনি ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়, যার ফলে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায় বলেই মনে করেন তিনি।