দেশের রাজনৈতিক সংস্কারচেষ্টাকে ‘অতি সংস্কারের নামে অপ্রয়োজনীয় প্রস্তাবের উৎসব’ আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন (Asaduzzaman Ripon)। তিনি বলেন, “সংস্কারের নামে বিভেদ বাড়ছে, অথচ যেই বাস্তব সংস্কারের প্রয়োজন, সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না।”
শনিবার (২১ জুন) ফরিদপুর শহরের অম্বিকা হলে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিপন বলেন, “মতৈক্য কমিশন আসলে এখন ‘মতানৈক্য কমিশন’-এ পরিণত হয়েছে। সভায় হৈচৈ, বয়কট, অ্যাজেন্ডার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।”
তিনি দাবি করেন, কমিশনের কাজ ছিল নির্দিষ্ট লক্ষ্যপূরণ, কিন্তু এখন তারা অনেকগুলো অতিরিক্ত অ্যাজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছে, যা তাদের কাজ নয়। “সংস্কার যেভাবে এগোচ্ছে, তা অত্যন্ত ধীর এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট,”—বলেন রিপন।
রিপন আরও বলেন, “দেশে ইতিমধ্যেই গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে। মানুষ রক্ত দিয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে। এখনই সময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। এই সুযোগ যদি আবার হারিয়ে যায়, তাহলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।”
এ সময় তিনি ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “নির্বাচনের আগে কাগজে-কলমে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা পার্টিগুলো বাস্তবে অস্তিত্বহীন। এদের অফিস নেই, নেতাকর্মী নেই—শুধু নিবন্ধনের নামে প্রহসন চলছে।” তিনি নির্বাচন কমিশন (Election Commission)-এর প্রতি আহ্বান জানান, এসব দলের অফিস ও মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা যাচাই করে একটি ডাটাবেজ তৈরি করতে।
নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রিপনের হুঁশিয়ারি, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লোকেরা যেন বিএনপিতে অনুপ্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সজাগ থাকতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ (Shama Obaid)। তার বক্তব্যেও দলীয় ভেতরের রাজনৈতিক উত্তাপের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “অনেকে ‘গা জ্বলানো’ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, কেন তারেক রহমান লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলেন! অথচ এটা স্বাভাবিক রাজনৈতিক পদক্ষেপ—আগামীর বাংলাদেশ গঠনের জন্য প্রত্যেক দলের নেতার সঙ্গেই উপদেষ্টার কথা বলা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে, গুম-খুনে জড়িত থেকেছে, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল—তারা বিএনপির নতুন সদস্য হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে। বিএনপি শহীদ জিয়ার আদর্শের দল, এখানে সদস্য হতে হলে সেই আদর্শ ধারণ করতে হবে।”
শামা ওবায়েদ এ সময় নতুন প্রজন্মের তরুণদের বিএনপিতে যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেন। বলেন, “বাংলাদেশে হাজার হাজার তরুণ আছে যারা কোনো রাজনৈতিক দলে নেই। এই তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করা গেলে প্রান্তিক পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিএনপি আরও শক্তিশালী হতে পারবে।”
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া। সভায় ফরিদপুর বিভাগের পাঁচটি জেলার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।