জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারগুলোর জন্য মিরপুরে ৮০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ, একনেক অনুমোদনের অপেক্ষায় প্রকল্প

১৯৭০-এর দশকের উত্তাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আত্মোৎসর্গকারী জুলাই আন্দোলনের শহীদদের পরিবারের আবাসনের নিশ্চয়তা দিতে রাজধানীর মিরপুরে এক বিশাল আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পের জন্য ৭৬২ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে, যা পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। এখন একমাত্র অপেক্ষা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের।

এই প্রকল্পের অধীনে মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় ছয়টি ১৪ তলা ও দশটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে মোট ৮০৪টি ফ্ল্যাট থাকবে। প্রতিটি ফ্ল্যাট হবে প্রায় ১,৩৫৫ বর্গফুটের, যাতে থাকবে দুটি শয়নকক্ষ, একটি ড্রয়িং ও একটি লিভিং রুম, রান্নাঘর, খাবার ঘর এবং তিনটি টয়লেট। এসব ফ্ল্যাট নির্মাণের দায়িত্ব পাবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জুলাই আন্দোলনে মোট ৮৩৪ জনকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের পরিবার ইতোমধ্যেই এককালীন ৩০ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী পাচ্ছে। এবার এসব পরিবারের জন্য স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পটি, যার কাজ ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে কিছু জটিলতা। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তরাধিকার নির্ধারণ। বিশেষ করে বিবাহিত শহীদদের ক্ষেত্রে পরিবারে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে—উত্তরাধিকার হবেন স্ত্রী-সন্তান নাকি বাবা-মা? এই সমস্যার কারণে অনেক পরিবার এখনো সরকারি সঞ্চয়পত্র বা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ৬৭১টি পরিবারকে সঞ্চয়পত্র দেওয়া সম্ভব হলেও, বাকি ১৬৩টি পরিবার তা পায়নি।

এই জটিলতা নিরসনে সরকার একটি সুনির্দিষ্ট ‘ওয়ারিশ নীতিমালা’ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে ভবিষ্যতে আইনি বা পারিবারিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয়।

গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফ্ল্যাটগুলো বিনামূল্যে দেওয়া হলেও হস্তান্তরের সময় নিবন্ধন বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকার খরচ হতে পারে। এই ব্যয় শহীদ পরিবার বহন করবে, না কি সরকার—তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি বা ভাড়া দেওয়ার সুযোগ থাকবে কি না, সে নিয়েও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তবে কেউ বিক্রি করতে চাইলে সরকারের অনুমোদন লাগবে বলে জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, যেসব শহীদ পরিবার ঢাকা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান না, তাদের জন্য বিকল্প কোনো আবাসন সুবিধা রাখা যায় কি না, সে বিষয়েও নীতিনির্ধারকরা ভাবনা-চিন্তা করছেন।

উল্লেখ্য, এর আগেও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের কল্যাণে ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলেন। এই অর্থ এককালীন অনুদান, মাসিক সম্মানী, চিকিৎসা, আবাসন ও কর্মসংস্থান ব্যয়ে ব্যবহার হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *