বিতর্কিত ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকা সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল (Kazi Habibul Awal) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশের একটি সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যকার ২০২৪ সালের নির্বাচন ‘আমি-ডামি ভোট’ উপাধি পেয়েছিল, যা কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনমনে প্রশ্ন তুলেছিল। সেই নির্বাচন ঘিরেই তাকে নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনা তৈরি হয়, বিশেষ করে ভোটগ্রহণ এবং ভোটের হার নিয়ে তার দেওয়া বিভ্রান্তিকর তথ্য।
ভোটের দিনে বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭.১৫ শতাংশ বলে জানানো হলেও, মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে এই হার ৪০ শতাংশে উন্নীত হয় বলে ঘোষণা দেন সিইসি। এমন নাটকীয় পরিবর্তন নিয়ে গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এমনকি নিজেই প্রথমে ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলেও পরে তা পরিবর্তন করে ৪০ শতাংশ দাবি করেন তিনি।
এসব অনিয়ম ও ‘কারচুপি’র অভিযোগে বিরোধী দল বিএনপি (BNP) একটি মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় কাজী হাবিবুল আউয়ালের পাশাপাশি তার পূর্বসূরি সাবেক সিইসি এ কে এম নুরুল হুদা (A K M Nurul Huda) ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনাকে “স্বৈরাচারী” আখ্যায়িত করে বলা হয়, তিনি টানা তিনবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ক্ষমতায় ছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হাবিবুল আউয়াল এক প্রকার লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর আজ তার গ্রেফতার দেশব্যাপী নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এর আগে, রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে স্থানীয় জনগণ সাবেক সিইসি এ কে এম নুরুল হুদা-কে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। হাবিবুল আউয়ালের গ্রেফতার সেই ঘটনার ধারাবাহিক অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার সত্যতা ও পেছনের প্রেক্ষাপট নিয়ে এখনো সরকারি কোনো ব্যাখ্যা আসেনি। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এই দুই প্রভাবশালী সাবেক নির্বাচন কমিশনারের গ্রেফতার নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ও তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।