সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) সংক্রান্ত প্রস্তাবকে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফাহাম আবদুস সালাম (Faham Abdus Salam)। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, এনসিসি মূলত ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই পরিকল্পিত, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের শাসনব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নিচে তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো—
এনসিসি (সাংবিধানিক কাউন্সিল) হোলো সংবিধান সংস্কারের নিকৃষ্টতম প্রস্তাব।
এই প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। যিনি বা যারা এই প্রস্তাব করেছেন তারা মনে করছেন যে সংসদে চিরকাল একটি দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে থাকবে এবং সেই দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যখন সংসদে দুটি দল কাছাকাছি অবস্থায় থাকবে (যেমন অস্ট্রেলিয়ায় মূল দুই দল বেশীরভাগ সংসদে খুব কাছাকাছি অবস্থায় থাকে) – এবং যেই অবস্থাটাই আমাদের কাম্য – সেই অবস্থায় এনসিসির কারণে সরকারে ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে। কেন? কারণ এনসিসিতে পার করার জন্য সরকার সবচাইতে নিকৃষ্ট তিনজন দলীয় ভৃত্যের নাম প্রস্তাব করবে। ফলে প্রশাসনে আরো নীচের থেকে দলীয়করণ করার ইনসেনটিভ বাড়ানো হবে।
একটা দেশের মিলিট্ৰি চীফ কে হবে – এটা ঠিক করার দায়িত্ব বা অধিকার বিরোধী দলীয় নেতার কখনোই থাকা উচিত না। আপনি যদি সিস্টেম ফেয়ার করতে চান তাহলে বহু লোকের (হাই অফিশিয়াল) আমলনামা বিরোধী দলের নেতার কাছে যাবে এবং সে এটা লীক করবে ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে। আপনার মনে হচ্ছে যে আমি বাড়িয়ে বলছি কিন্তু বর্তমান অরাজনৈতিক সরকারের একজন উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন যে ক্যাবিনেট মিটিং এ মন খুলে কথা বলা যায় না। কিছু বললেই সেটা নিয়ে ভিডিয়ো হয়ে যায়। চিন্তা করেন যে অবস্থা কতোটা ভয়াবহ। এই অবস্থায় আপনি যদি ডিজিএফআই বা গোয়েন্দা সংস্থার পর্যালোচনা বিরোধী দলীয় নেতার কাছে দেন – এবং সে যদি হয় শেখ হাসিনা – ১০০% গ্যারান্টি যে পরের দিন সেটা দুনিয়া জানবে। আর যদি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট না দেন – বিরোধী দলীয় নেতা কীভাবে ডিসিশান নেবে যে অমুক তিনজনের মধ্যে কে সবচেয়ে ভালো?
সে দেখবে যে জেনরেল মকসুদের বাড়ীতে শেখ হাসিনার ভাতিজা কেন চিংড়ি মাছের চচ্চড়ি খেয়েছিলো? শুধুমাত্র এলিজিয়েন্স দেখা হবে। কাউন্সিলের দুই সাইডই দেখবে কে আমার দলের গোলাম?
বাঙালির খাইসলত নিয়ে এতো বেশী উচ্ছসিত হওয়ার কিছু নাই। ভবিষতে অবশ্যই শেখ হাসিনার মতো খাইষ্টা, নেগেটিভ ক্যারেক্টার বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসবে এবং বিরোধী দলের নেতা হবে। বাংলাদেশের কালচার এই ধরনের নেগেটিভ ও ছ্যাচড়া মানুষকেই রাজনীতিতে রিওয়ার্ড করে। যেই পার্টি থেকেই আসুক তার কাজ হবে প্রতিটা কাজকে আটকানো। এই টাইপ মানুষকে আস্থায় নেয়া সম্ভব না, টলারেট করা সম্ভব। বাংলাদেশের রিয়ালিটিতে এনসিসির ৯ জনের মধ্যে অন্তত ৪ জন চাইবে সরকার ফেইল করুক। যে চায় যে সরকার ফেইল করুক আর যে চায় যে সরকার ভালো করুক – এই দুইজনের কনসেন্সাস হবে ডিজাস্টারাস।
এটা মোটেও বিএনপির সমস্যা না। অতি অবশ্যই বিএনপি বিরোধী দলে যাবে। ভবিষ্যতে জামাত কিংবা এনসিপি কিংবা কোনো জোট সরকার গঠন করবে। তার সময়েও একই সমস্যা দেখা দেবে।
……………………
আমাদের দেশে ঐতিহাসিকভাবে দুইটি সাংবিধানিক পদ নিয়ে গুরুতর সমস্যা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এই দুইটি পদে নিয়োগ দিতে নিয়ম করা যেতে পারে যে একটি সংসদীয় কমিটি তিনজন সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেটের ইন্টারভিউ নেবে। পুরা দেশ দেখবে লাইভ টিভিতে। এবং এই কমিটির প্রধান হওয়া উচিত বিরোধী দল থেকে। এই ইন্টারভিউয়ের ভিত্তিতে সংসদ সদস্যরা (নিম্নকক্ষ) ভোটাভুটি করুক।
পুরা জাতি জানুক যে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হোলো।