নিউ ইয়র্ক শহরে রচিত হলো এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। প্রথমবারের মতো শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন একজন মুসলিম—জোহরান কোয়ামে মামদানি (Zohran Kwame Mamdani)। শুধু ধর্মীয় পরিচয় নয়, তিনি একজন প্রগতিশীল, সাহসী এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য লড়াইরত নেতা। তার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বৈচিত্র্য ও সহনশীলতার নতুন বার্তা দিলো আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী নগরী।
উগান্ডার কামপালায় জন্ম নেওয়া মামদানি ভারতীয় মুসলিম বাবা-মায়ের সন্তান। মা খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা, বাবা অর্থনীতিবিদ। নিউ ইয়র্কের কুইন্সে বড় হওয়া মামদানি আফ্রিকানা স্টাডিজে পড়াশোনা শেষে দেউলিয়াদের সহায়তায় কাজ করেছেন। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি ছিলেন কবি, র্যাপার এবং সক্রিয় কর্মী। ২০২০ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হয়ে তিনি এফোর্ডেবল হাউজিং, পরিবহন, জলবায়ু ও শ্রমিক অধিকারের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখেন।
মেয়র পদে তার প্রার্থীতা শুরুতে কেউ গুরুত্ব না দিলেও দ্রুতই মানুষের সমর্থন অর্জন করেন। তার প্রচারণার মূল স্লোগান ছিল, “ন্যায়, মর্যাদা ও সবার জন্য সুযোগ”। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নিরাপদ কর্মসংস্থান, গৃহহীনদের জন্য মর্যাদাসম্পন্ন আশ্রয়, পুলিশ সংস্কার এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় অগ্রাধিকার দেওয়ার।
সবচেয়ে আলোড়ন তুলেছে তার এক সাহসী বক্তব্য। এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যদি আন্তর্জাতিক আদালত অপরাধী ঘোষণা করে এবং তিনি নিউ ইয়র্কে আসেন, আমি মেয়র হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করব।” তিনি এটিকে কোনো বাড়াবাড়ি নয়, বরং আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইসরায়েল আছে, ফিলিস্তিনও আছে। ৩০০০ বছর আগের ধর্মীয় বা জাতিগত দাবিতে কোনো দেশ অন্য দেশকে ধ্বংস করতে পারে না। আন্তর্জাতিক আইন মানা এবং প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।”
তার এই অবস্থান শুধু আমেরিকান মুসলিমদের নয়, বরং ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো সকল মানুষের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে।
নিউ ইয়র্ক এবার যুক্ত হলো লন্ডন, বার্মিংহ্যাম, ম্যানচেস্টারসহ সেই শহরগুলোর তালিকায়, যেখানে একজন মুসলিম মেয়র জনপ্রিয়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
মামদানির বিজয় এক নতুন আমেরিকার প্রতীক—যেখানে ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ মূল্যায়িত হয় তাদের নীতিতে, আদর্শে এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতায়।
তিনি এখন শুধু একজন মেয়র নন, বরং এক নতুন আন্দোলনের নাম, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সাম্য, মানবতা ও সাহসী নেতৃত্ব।