জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন বাস্তবায়ন অযৌক্তিক ও অসম্ভব: সালাহউদ্দিন

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়, শুধুই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করাই যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed)। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে উঠেছে এবং এর আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের কোনো বাস্তব সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের জন্যই তো এত দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম। এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা যে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছেছি, তার ফোকাস হওয়া উচিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই।”

তাঁর মতে, নির্বাচনের প্রস্তুতি যেমন প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক—তেমনই সাধারণ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতিও একটি বড় বিষয়। “যেখানে পুরো জাতি জাতীয় নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে, সেখানে হঠাৎ করে স্থানীয় নির্বাচনের আলাপ তুলে মূল ইস্যু থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়া হতে পারে,” বলেন সালাহউদ্দিন।

তিনি আরও জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের (A.M.M. Nasir Uddin) মধ্যে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে নির্বাচনকালীন সময় নির্ধারণ নিয়েই আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

সালাহউদ্দিন বলেন, “বিএনপির ধারণা অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা হয়তো সিইসিকে বার্তা দিয়েছেন—আগামী ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে। আর এই প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শুরু করা সম্ভব।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন উভয় পক্ষ নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এবং যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হবে।”

এই প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক (Zainul Abdin Farroque) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বলেন, “রমজানের আগেই দেশে নির্বাচন সম্পন্ন হবে—এই প্রত্যাশাই জনগণের। আর কোনো বিলম্ব নয়। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সময় শেষ।”

তিনি আরও বলেন, “লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর নির্বাচনী ধোঁয়াশা কেটে গেছে। এখন স্পষ্ট পথেই এগোচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়া।”

কেন এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য?

বিশ্লেষকদের মতে, স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি বিস্তৃত ও সময়সাপেক্ষ। একাধিক ধাপে নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইসহ বিপুল পরিমাণ লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ থাকে এই প্রক্রিয়ায়। আবার স্থানীয় নির্বাচন রাজনৈতিক উত্তাপ প্রশমিত করতে নয়, বরং জাতীয় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

তাই যখন রাজনৈতিক দলগুলো, অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশন একটি সময় নির্ধারণ করে একমত হচ্ছে—তখন স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন এক ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি করবে, যা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কাম্য নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *