‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে সমালোচনার ঝড়, ‘গৌরবের নামে স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা’ বলছেন বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান

গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ এবং ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণার পর, রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ নামকরণ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান (Zahedur Rahman) তার ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া বিশ্লেষণে এই ঘোষণাগুলোর যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সরাসরি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

তার মতে, একটি সরকার নিজেই যখন নিজেদের কর্মকাণ্ডকে গৌরবের ছায়ায় ঢেকে “দিবস” ঘোষণা করে, তখন তা গণতন্ত্রের চেয়ে বরং “স্বৈরতন্ত্রোত্তর আত্মপ্রশংসার” দিকেই ইঙ্গিত করে। তার ভাষায়, “সরকার নিজেই নিজের কর্মকাণ্ডকে গৌরবমণ্ডিত করছে—এটি শেখ হাসিনা শাসনামলের প্রতিচ্ছবি মনে করিয়ে দেয়।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “নতুন বাংলাদেশ” বলতে সরকার কী বোঝাচ্ছে, এবং সেটি কিভাবে ৮ আগস্টের সাথে যুক্ত? এ ধরনের একতরফা দিবস নির্ধারণ, যা জনগণের সম্মতি ও আলোচনা ছাড়াই ঘোষণা করা হয়, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর করতে পারে বলেই তার আশঙ্কা।

আলোচনায় উঠে আসে শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে ১৬ জুলাইকে ‘আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার প্রসঙ্গও। আবু সাঈদের আত্মত্যাগকে তিনি যথার্থ মর্যাদা দিলেও মনে করেন, আলাদা দিবস ঘোষণার প্রয়োজন ছিল না। তার মতে, “গণঅভ্যুত্থানে অনেকেই শহীদ হয়েছেন, কিন্তু সবার জন্য আলাদা দিবস করা হয়নি। তাই ভারসাম্য থাকা উচিত।”

জাহেদ উর রহমানের বক্তব্যে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় ৫ আগস্টের তাৎপর্য। তার মতে, এই দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে—কিন্তু সেটিও হওয়া উচিত ছিল জনগণের পরামর্শে, সবার ঐকমত্যে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নামকরণের মধ্য দিয়ে।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “৫ আগস্টের ঘটনাকে যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করা দরকার ছিল। এই দিনটির গুরুত্ব উপেক্ষা না করে, তা নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং জনমতের ভিত্তিতে নামকরণ করলে সেটি বেশি গ্রহণযোগ্য হতো।”

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়েও তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’কে তিনি ‘হাস্যকর’ বলেই আখ্যা দেন। বরং তার পরামর্শ, “একটি মাত্র দিন, ৫ আগস্ট, সেটিকে ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে পালন করলেই যথেষ্ট হতো।”

এই বিশ্লেষণ তুলে ধরে একটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে—গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ও তাৎপর্য কি সরকার জনগণের সঙ্গে মিলেই ধারণ করবে, নাকি একতরফা ‘দিবস ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে সেই ইতিহাসও দলীয় ব্যাখ্যার আওতায় পড়ে যাবে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *