পুরস্কার রেখে কবরখোদক মনু মিয়ার জানাজায় ছুটে গেলেন খায়রুল বাসার

বিনয়ের প্রতীক, নিঃস্বার্থ সেবার এক নীরব কিংবদন্তি কিশোরগঞ্জের মনু মিয়া আর নেই। মৃত্যুর আগে দেশবাসী তাঁর অবদান জানতে পেরেছিল, কিন্তু ততক্ষণে জীবন থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছিলেন তিনি। কবর খোড়াকে জীবনের ব্রত করে তোলা এই মানুষটির পাশে শেষ মুহূর্তে দাঁড়িয়েছেন এক অন্যরকম তারকা—অভিনেতা খায়রুল বাসার (Khayrul Basar)। পুরস্কার-উপাধি ফেলে তিনি ছুটে গেছেন মনু মিয়ার জানাজায়, যেন শ্রদ্ধার শেষ চিহ্ন রেখে আসা।

অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ বৃহত্তর এলাকায় কেউ মারা গেলে কবর খোঁড়ার কাজে নিঃস্বার্থভাবে হাজির হতেন মনু মিয়া। কোদাল, খুন্তি, হাতুড়ি নিয়ে ছুটে যেতেন নির্ভরতার প্রতীক হয়ে। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় মনু মিয়ার সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী—তার ঘোড়াটি মারা যায়। এই ঘোড়াটির পিঠে চড়েই তিনি ছুটতেন মৃত্যুর খবর শুনে। পরিবারের সদস্যরা এতটাই শঙ্কিত ছিলেন যে ঘোড়ার মৃত্যুসংবাদও তাকে দিতে ভয় পেতেন।

এই খবর প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তখনই ফেসবুকে আবেগঘন একটি পোস্ট দিয়ে খায়রুল বাসার লেখেন, ‘মনু মিয়াকে আমি ঘোড়া কিনে দিতে চাই। বিনিময়ে আমার কবর খোঁড়া পর্যন্ত আল্লাহ যেন উনাকে বাঁচিয়ে রাখেন।’ শুধু লেখাতেই থেমে থাকেননি বাসার; তিনি সরাসরি ছুটে যান হাসপাতালে, দেখা করেন মনু মিয়ার সঙ্গে। দীর্ঘ আলাপে মনু মিয়া তাঁকে জানান, তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে নিজেই সাতটা ঘোড়া কিনে নিতে পারবেন। কোনো অনুদান নিতে নারাজ ছিলেন তিনি।

কিন্তু সেই আশাবাদী মানুষটির আর ফিরে যাওয়া হলো না। আজ (২৮ জুন) সকাল ১০টায় কিশোরগঞ্জে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গোরখোদক মনু মিয়া (Manu Mia) (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নিজ এলাকায় বাদ আসর। অভিনেতা খায়রুল বাসার ব্যক্তিগত ব্যস্ততা ফেলে তাঁর জানাজায় ছুটে যান কিশোরগঞ্জে। একদিকে একজন তারকা, অন্যদিকে এক নিঃশব্দ সেবক—জীবনের দুই প্রান্ত থেকে এক অপূর্ব শ্রদ্ধার মিলন ঘটে গেল মনু মিয়ার জানাজায়।

একজন গোরখোদকের মৃত্যুতেও দেশবাসী শোকাবিভূত। আর তার গর্বিত বিদায়ে হাজির হয়ে খায়রুল বাসার যেন জানিয়ে দিলেন, সত্যিকারের নায়কত্ব কেবল পর্দায় হয় না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *