পিআর পদ্ধতিতে এমপি চেনা যাবে না, এটি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়: সালাহউদ্দিন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি অবান্তর এবং বাস্তবতা-বিবর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed)। তাঁর মতে, এই পদ্ধতিতে ভোটাররা জানবেন না কে তাঁদের সংসদ সদস্য, যা গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দেবে।

আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘যুদ্ধের ময়দান থেকে রাষ্ট্রের প্রধান জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক একটি স্মারক প্রকাশনা ও আর্কাইভ উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি (BNP) নেতা এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আনুপাতিক নির্বাচনের কথা যাঁরা বলছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট— হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা, না হয় বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন পুরোপুরি ঠেকানো। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে যত মাতামাতি, তা প্রকৃতপক্ষে জাতীয় নির্বাচন থেকে দৃষ্টি সরানোর কৌশল।”

তিনি আরও বলেন, “পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে ভোটাররা জানতেই পারবেন না কে তাঁদের সংসদ সদস্য। একজন সাধারণ মানুষ প্রয়োজনে যাঁর কাছে যাবেন, এমন একজন নির্দিষ্ট এমপি থাকবেই না। ফলে জনগণের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়বে, যা গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে দেবে।”

সালাহউদ্দিন জানান, ২০০৭-০৮ সালের সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বিএনপির যে আলোচনা হয়েছিল, সেখানেও পিআর পদ্ধতির বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি। তিনি বলেন, “এই পদ্ধতির কোনো ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। পৃথিবীর অনেক দেশে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তবে আমাদের সমাজ ও রাজনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে এই ব্যবস্থার কোনো সামঞ্জস্য নেই।”

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৭ বছর ধরে জনগণ সংগ্রাম করেছে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের জন্য—not স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে। অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়েছে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।”

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আভাস প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “নির্বাচনের তারিখ তখনই বিশ্বাসযোগ্য হবে, যখন প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশন (Election Commission) জাতিকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তা জানাবেন।”

অন্যদিকে, আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত এক মহাসমাবেশে ভিন্নমত তুলে ধরেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার (Mia Golam Porwar)। তিনি বলেন, “পিআর পদ্ধতি ছাড়া দেশের মানুষ কোনো নির্বাচন মানবে না।”

এই মহাসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (Syed Muhammad Rezaul Karim) আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “ভোটের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালু করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।”

আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই পিআর পদ্ধতি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি যেখানে এটিকে অপ্রয়োগযোগ্য বলছে, সেখানে ইসলামপন্থী দলগুলো একে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বলে দাবি করছে। রাজনৈতিক বিভাজনের এই ধারা কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *