২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের ‘রাতের ভোট’ কেলেঙ্কারিতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা (KM Nurul Huda) আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। বিএনপির দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (১ জুলাই) ঢাকার আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন তিনি।
জানা গেছে, আট দিনের দুই দফা রিমান্ড শেষে দুপুর ২টার দিকে তাকে হাজির করা হয় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালতে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পিবিআইয়ের পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান, নূরুল হুদার ‘স্বেচ্ছায় জবানবন্দি’ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে আদালতে আবেদন করেন। আদালত তা গ্রহণ করে বিকেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে তাকে আদালত থেকে বের করা হয়।
আলোচিত এই মামলার সূত্রপাত ২২ জুন, যখন রাজধানীর উত্তরায় জনতার হাতে আটক হয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর হন সাবেক এই সিইসি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও, যেখানে তাকে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায় এবং জনতার হাতে অপমান ও শারীরিক নিগ্রহের শিকার হতে দেখা যায়—গলায় জুতার মালা পরানোসহ মুখে চড়-থাপ্পড়ের দৃশ্য।
পরদিন, ২৩ জুন আদালত প্রথম দফায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন, এবং ২৭ জুন দ্বিতীয় দফায় আরও ৪ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গত ২২ জুন এই মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্বে থাকাকালীন নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে ভয়ভীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করেন তৎকালীন সিইসি। ২৫ জুন মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা সংযুক্ত করা হয়।
এই মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন আরও দুই প্রাক্তন সিইসি—২০১৪ সালের নির্বাচনের কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ (Kazi Rakibuddin Ahmad) ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের কাজী হাবিবুল আউয়াল (Kazi Habibul Awal)। একই সঙ্গে অভিযোগের আওতায় এসেছেন পুলিশের পাঁচ সাবেক মহাপরিদর্শক—হাসান মাহমুদ খন্দকার (Hasan Mahmud Khandker), এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এই মামলাটি শুধু একটি নির্বাচনের নয়, বরং দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা, সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতার প্রশ্নকে সামনে এনে দিয়েছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনারের স্বীকারোক্তি ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।