বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’-এর প্রথম বর্ষপূর্তিতে নতুন প্রত্যয় নিয়ে সামনে এলো বিএনপি (BNP)। মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, “এখনই সময় জনগণের ভোটের মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক, ইনসাফভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার।”
তারেক রহমান বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট পলায়নের পরেই বলেছিলাম—এই বিজয় বহু শহীদের রক্তের বিনিময়ে এসেছে। শহীদরা শুধু স্বজন নন, তারা বাংলাদেশের গৌরব, তারা মুক্তিকামী জনতার প্রতীক।”
তিনি জানান, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শহীদদের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণসহ একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। “আমরা এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়তে চাই, যেখানে ক্ষমতা থাকবে জনগণের হাতে। রাজনীতি হবে ওয়াদাভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক।”
৩৬ দিনব্যাপী এই বর্ষপূর্তি কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)। সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, “দেড় দশকের রাজনৈতিক সংগ্রামে আমরা গুম, খুন ও অপহরণের মাধ্যমে বহু নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। শুধু ‘জুলাই আন্দোলনে’ ১,৫০০ শহীদ, ৩০ হাজার আহত এবং এক হাজারেরও বেশি মানুষ পঙ্গু হয়েছেন। এমনকি শিশুরাও শহীদ হয়েছে। আমরা আর কোনো মা-বাবাকে সন্তান হারাতে দেখতে চাই না।”
তিনি আরও বলেন, “৫৪ বছরের ইতিহাসে দেশের মানুষ অনেক কিছু সহ্য করেছে। এখন সময় এসেছে শৃঙ্খলিত রাজনীতির বদলে মুক্ত চিন্তা, সমান সুযোগ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দিকে এগোনোর। বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাব স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, সুযোগ পেলে জাতীয় সরকার গঠন করে আমরা বাস্তবায়নের দিকে যাবো।”
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ৬৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, শহীদ পরিবার, আহত নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনেরা। ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, ক্রেস্ট প্রদানসহ ছিল শহীদদের সম্মান জানাতে বিভিন্ন আয়োজন। উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, মোস্তফা জামাল হায়দার, মাওলানা আব্দুল হালিম, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জোনায়েদ সাকি, ববি হাজ্জাজ, মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাইফুল হক, টিপু বিশ্বাস, আহমদ আলী কাসেমি, রাশেদ খানসহ প্রায় সব জোট ও দলগুলোর প্রতিনিধিরা।
বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় বিএনপির ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ, যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আযম মীর শাহিদুল আহসান, বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীনসহ বিশিষ্টজনেরা।
তারেক রহমানের বক্তব্যে ফুটে ওঠে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার নীতি ও দর্শন। “জাতীয় ঐক্যে সবাই এক হতে না পারলেও, তাঁবেদার অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্য থাকবে অটুট, ইনশাআল্লাহ।”