বাংলাদেশের সমাজে টাকার প্রভাব এতটাই গভীর যে ক্ষমতায় যাওয়ার পর অনেক নেতার আচরণে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়—এমন মন্তব্য করেছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান (Dr. Zahed Ur Rahman)। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “এই সমাজে যারা ক্ষমতায় যাওয়ার কিছুদিন আগেও আন্দোলনে মারা যেতে চেয়েছিলেন, ক্ষমতার কাছাকাছি গেলেই তাদের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। এখানে উনি খারাপ হবেন—এটাও সত্যি, কারণ টাকার অকল্পনীয় শক্তি আছে আমাদের সমাজে।”
ব্যক্তিগত ক্ষোভেই রাস্তায় সাধারণ মানুষ
তিনি বলেন, এবারের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই রাজনীতির গভীর কোনো বোঝাপড়া থেকে নয়, বরং ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে মাঠে নেমেছেন। “আমরা যে সংস্কারের কথা বলছি, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে যেন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা না ফেরে, এ কথাগুলো বহু মানুষ জানেই না। শুধু ব্যক্তিগত কষ্ট, অবিচার, নিপীড়নের অভিজ্ঞতা থেকে তারা রাস্তায় নেমেছেন।”
যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলনে পরিবহন শ্রমিক, হিউম্যান হলার চালক ও সহকারীদের অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওদের জীবনে ছাত্রলীগের অত্যাচার একটা অভিশাপ হয়ে এসেছে। কঠিন শ্রম করেও ওরা টাকা জমাতে পারত না, চাঁদাবাজির কারণে। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তারা রাস্তায় নেমেছে।”
২০১৮ বনাম ২০২৪: অর্থনীতিই বড় পার্থক্য
ডা. জাহেদ ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (Safe Roads Movement) প্রসঙ্গে বলেন, “সেই আন্দোলনে কেন সফল হতে পারিনি? তখন রাস্তায় হেলমেট পরা বাচ্চাদের পর্যন্ত পেটানো হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মারধর করা হয়েছিল—তবুও মানুষ রাস্তায় নামেনি। অথচ এই বছর মানুষ ব্যাপকভাবে মাঠে নেমেছে। কেন?”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক খারাপ। মানুষ যখন দেখতে পাচ্ছে তাদের অর্থনৈতিক সংকট প্রকট, তখনই তারা সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। অর্থনৈতিক দিকটাই মূল চালিকাশক্তি ছিল এবার।”
সংস্কারে অগ্রগতি হলেও সন্তুষ্টির জায়গা ভিন্ন
সরকারের সক্ষমতা নিয়ে চলমান সমালোচনার প্রেক্ষিতে ডা. জাহেদ বলেন, “হ্যাঁ, অনেক সমালোচনা আছে। তবে সংস্কার নিয়ে এখন অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, কিছু না হলেও একটা বড় বাধা আমরা সরাতে পেরেছি। সেটা বড় অর্জন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সংস্কারে অনেক অগ্রগতি হয়েছে বলেই আমি মনে করি। আর যদি একটাও না হয়, তবুও আমি সন্তুষ্ট। কারণ যেই প্রতিবন্ধকতা আমাদের সামনে ছিল, সেটাকে আমরা সরিয়ে ফেলতে পেরেছি—এটাই বড় কথা।”