৪ আগস্ট ছাত্রদের ঢাল হয়ে দাঁড়ানো সেই মাসুদ আলম এখন রমনার ডিসি

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট—বাংলাদেশের রাজপথ উত্তাল তখন কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। রাষ্ট্রের নিপীড়নমুখী মনোভাবের মুখে দাঁড়িয়ে অনেক তরুণ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন, আহত হন হাজারো। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে এক অনন্য ভূমিকা রাখেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা—তৎকালীন পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম (Md. Masud Alam)। আজ তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (Dhaka Metropolitan Police)-এর রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি)।

সম্প্রতি একটি পুরনো ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভিডিওতে মাসুদ আলমকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, “যদি তোমাদের অ্যাটাক করার জন্য কেউ আসে, তাহলে আমি আছি। আমার উপর দিয়ে যাইতে হবে। আগে আমাকে মারতে হবে, তারপর যাইতে হবে। এই দিকে গ্যাঞ্জাম করার দরকার নাই…”।

এই ভিডিও প্রথম প্রকাশ করে ‘দ্য রেড জুলাই’ (The Red July) নামের একটি ফেসবুক পেজ। পরে তা শেয়ার করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-এর প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে।

অনেকেই মাসুদ আলমের এই সাহসিকতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এক ব্যবহারকারী নাজমুস সাদাত কমেন্টে লিখেছেন, “সেদিন মাসুদ ভাই সাহসী ভূমিকা না নিলে হয়তো শহীদের তালিকা আরও দীর্ঘ হতো।”

পাবনার আন্দোলনে যেভাবে পুলিশের উপস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নিতে পারত, সেভাবে হয়নি বলেই মনে করেন অনেক প্রত্যক্ষদর্শী। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পেছনে থাকা ফেসবুক পেজ ‘দ্য রেড জুলাই’-এর অ্যাডমিন সজিব বলেন, “জুলাই আন্দোলনে মাসুদ আলম ছাত্রদের পক্ষেই ছিলেন। আমাদের পাবনা জেলা টিম থেকেই ভিডিওটা আসে। কমেন্টগুলোই বলে দেয়, স্থানীয়রা ওনাকে কতটা সম্মান করেন।”

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সাহসী ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন মাসুদ আলম। সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসে যখন রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি জানায়, তখন হঠাৎ দায়িত্বে ডাকা হলে খেলার মাঠ থেকে জার্সি পরেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মাসুদ আলম।

এছাড়া গত ১৫ এপ্রিল সায়েন্সল্যাব মোড়ে সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময়ও তিনি আলোচনায় আসেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, “এই সংঘর্ষের কারণ আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।”

পেশাগতভাবে মাসুদ আলম বিসিএস ২৮তম ব্যাচের পুলিশ ক্যাডার। তিনি র‌্যাব-৬ এর ঝিনাইদহ ক্যাম্পে এবং পাবনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে হন পুলিশ সুপার। সর্বশেষ পদায়নে ডিএমপির (DMP) রমনা বিভাগের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

যখন পুলিশের বেশিরভাগ অংশই নিপীড়কের ভূমিকায়, তখন মাসুদ আলমের মতো ব্যতিক্রম কিছু মানুষের অবস্থান এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সমাজের ক্ষতস্থানে অল্প একটু মানবিকতার স্পর্শও অনেক শক্তি জোগায়—সেটাই যেন প্রমাণ করেন তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *